মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার আরও বাড়ল
এখন থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) এর সাথে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ এর স্থলে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে ঋণপ্রবাহ কমানোর আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নীতি সুদহার বাড়ানোর পরের দিনই ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার রাতে এক জরুরি সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) এর সাথে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ এর স্থলে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
চলতি অক্টোবর মাসের জন্য ৭ দশমিক ২০ শতাংশ ‘স্মার্ট’ সুদহার নির্ধারিত আছে। এর সঙ্গে আরও ৩ দশমিক ৫ শতাংশ যোগ করে নতুন ঋণের সুদহার হিসাব করা হবে।
অর্থাৎ এখন থেকে বড় অংকের ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার লক্ষ্যে নিচের নির্দেশনাগুলো পরিপালন করতে হবে-
>> ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ এর সাথে সর্বোচ্চ ৩% এর স্থলে সর্বোচ্চ ৩.৫% মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
এবং
>> প্রি-শিপমেন্ট রপ্তানি ঋণ এবং কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‘স্মার্ট’ এর সাথে সর্বোচ্চ ২% এর স্থলে সর্বোচ্চ ২.৫% মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করতে হবে।
সার্কুলারে বলা হয়, এখন থেকে নতুনভাবে বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে এই সুদহার প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া এ বিষয়ে জারি করা আগের সার্কুলারের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ২৯(২)(চ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো; যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে নিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকে ‘স্মার্ট’সুদহার করিডোর চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে এই সুদহার ছিল একই, ৭ দমিক ১০ শতাংশ। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ‘স্মার্ট’সুদহার বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
অক্টোবর মাসে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশে।
নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমাসের ১ তারিখে আগের মাসের ‘স্মার্ট’রেট জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই হার সেই মাসে দেওয়া নতুন ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ওই মাসের গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ছয় মাসের জন্য এই সুদহার কার্যকর থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, সুদ হার বাড়ায় মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা কিছুটা সহজ হবে। আর নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অনেক ব্যাংকেই আমানতের সুদহার বাড়তে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১২৮ দিন মেয়াদি টেজ্রারি বিলের ৬ মাসের সুদহার প্রকাশ করছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গত জানুয়ারিতে ‘স্মার্ট’সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
এর পর প্রতি মাসেই একটু একটু করে বেড়ে মে মাসে এই সুদহার বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। জুন মাসে এই সুদ হার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
এদিকে মূল্যস্ফীতির পারদ নামাতে নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিষয়ক কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য নীতি সুদহার বা রেপো রেট একবারে দশমিক ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বুধবার জারি করা এ বিষয়ে আরেক সার্কুলারে বলা হয়, এখন নীতি সুদহার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে নতুন নীতি সুদহার বা রেপো রেট হবে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো যে টাকা ধার করে, তার সুদহার বাড়বে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে রাখা আমানত ও ব্যাংকঋণের সুদহারও বাড়বে।
অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সংকোচনমূলক মুদ্রা সরবরাহের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিল।
মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য এত দিন মূলত ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুদের হার বাড়লে মানুষ সাধারণত ব্যাংকে আমানত রাখতে উৎসাহিত হন।
নতুন দুই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক এআরএইচ ডটকমকে বলেন, “মূল্যস্ফীতি কমাতে এ সব সিদ্ধান্ত। ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশে নেমেছে, যা আগস্টে ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
তবে সেপ্টেম্বর মাসে গ্রাম-শহরনির্বিশেষে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনো ১২ শতাংশের ওপরেই ছিল। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে ওঠে।
কমেন্ট