পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭৫৬৮ টাকার প্রস্তাব সিপিডির

পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ১৭৫৬৮ টাকার প্রস্তাব সিপিডির

রোববার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ, পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব দেয় সিপিডি।

দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মাসিক ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা নিম্নতম মজুরি প্রস্তাব করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের উপস্থিতিতে এই সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বর্তমানে পোশাক শ্রমিকদের নিম্নতম মুজরি ৮ হাজার টাকা।

সিপিডি বলেছে, বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রতি পোশাকে বাড়তি ৭ সেন্ট দেয়, তাহলে এই মজুরি দিতে কারখানা মালিকেরা চাপে পড়বেন না।

রোববার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে আয়োজিত পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ, পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা অনুষ্ঠানে এই প্রস্তাব দেয় সিপিডি।

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা ৭৬টি কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর গবেষণা করে এই প্রস্তাব দিচ্ছে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র গবেষণা সহকারী তামিম আহমেদ।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট যেসব ব্যক্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তারা হলেন- পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, নিম্নতম মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান, নিম্নতম মজুরি বোর্ড শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

২০১৮ সালে সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনা করা হয়। একজন নতুন শ্রমিকের জন্য ৮,০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যার মূল বেতন হিসেবে ৪,১০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া হিসেবে ২,০৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ৬০০ টাকা, পরিবহন ভাতা হিসেবে ৩৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা হিসেবে ৯০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

মূল্যস্ফীতি, শ্রমিকের আর্থিক নিরাপত্তা বিবেচনায় সিপিডি ৯ হাজার ৫৬৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন এই ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব করেছে সিপিডি।

সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইডের যৌথ আয়োজনে 'গার্মেন্টস খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ: পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা' শীর্ষ গোলটেবিল বৈঠক এই মজুরির প্রস্তাব করেন সংস্থাটির সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে পোশাক খাতে মজুরি পুনর্নির্ধারণের একটা প্রক্রিয়া চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত বিষয় আলাপ আলোচনা চলছে। একই সঙ্গে দেখছি শ্রমিক প্রতিনিধিরা তাদের প্রস্তাবনাগুলো হাজির করছেন। আবার অন্যদিকে মালিকপক্ষের দিক থেকে সরাসরি কোনো প্রস্তাবনা না থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

“এগুলোর আলোকে আগামীতে নতুন মজুরি পুনর্নির্ধারিত হবে, যেটা ২০১৮ সালে সর্বশেষ হয়েছিল। বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গার্মেন্টস খাতের মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলগতভাবে এবং শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জায়গা থেকেও এটি গুরুত্বপূর্ণ হবে; কারণ সামনে যেহেতু নির্বাচন।”

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ২৭ শতাংশ কারখানা মালিক মনে করেন ১২ হাজার টাকার উপরে প্রায় ২১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে পারেন। শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি ১৮ হাজার টাকা চেয়েছেন। আবার শ্রমিক সংগঠনগুলো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম বেতনের প্রস্তাব করেছে।

“পোশাক খাতে জড়িত শ্রমিকের পরিবার ছোট হয়ে আসছে। আমরা গ্রেড সেভেনের জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করছি ১৭ হাজার ৫৬৮ টাকা। আমরা মনে করি গ্রেড সেভেনে একজন পোশাক শ্রমিকের এতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।”

এর আগে পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষক তামিম আহমেদ।

তিনি বলেন, “অর্থনীতিতে যখন মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে, সে সময় এসে এই মজুরি নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনাইটেড নেশন্সের মানবাধিকার সংক্রান্ত নীতিমালার আলোকের এই ন্যূনতম মজুরিকে দেখার চেষ্টা করেছি আমরা।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৭৬ শতাংশ পোশাক কারখানার ২২৮ জন শ্রমিকের ওপর জরিপ করে এই গবেষণাটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই খাতের ৬ জন স্টেক হোল্ডারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।”

বিদেশি ঋণের অর্ধেকের বেশি চলে গেছে সুদ-আসল শোধে পরবর্তী

বিদেশি ঋণের অর্ধেকের বেশি চলে গেছে সুদ-আসল শোধে

কমেন্ট