রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে রোববারও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভয় দিয়ে বলেছেন, “রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই।”
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিসিএস কর্মকর্তাদের ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, কিছু সমস্যায় আমরা আছি। রিজার্ভ নিয়ে অনেকে কথা বলে - আমি বলছি রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। আমার গোলায় যতক্ষণ খাবার আছে, ততক্ষণ আমরা চিন্তা করি না।”
দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার আহ্বানের পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফসল ফলাব, নিজের খাবার নিজেরা খাব। কেনাকাটা বা খরচ না হয় আমরা একটু কমই করব। কিন্তু আমার নিজের দেশের মর্যাদা নিয়ে আমাদের চলতে হবে।”
ব্যক্তিগত জীবনে তার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার চাওয়া একটাই, একটাই স্বপ্ন; যেটা আমার বাবা এদেশের মানুষকে নিয়ে দেখেছিলেন।
“মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা আর তাদের জীবন মান উন্নত করা। আজ পর্যন্ত যতটুকু করতে পেরেছি ভবিষ্যতের জন্য যেন সেটা স্থায়ী হয় চলমান থাকে, সেটাই আমার একমাত্র দাবি সবার কাছে।
“…দিনরাত পরিশ্রম করে আজকে বাংলাদেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছি তার থেকে বাংলাদেশ যেন কিছুতেই পিছিয়ে না যায়।”
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক এখন বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। কমতে কমতে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে আসায় এই সূচকটি নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।
রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বিরোধী দল রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করছে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা সরকারের সমালোচনা করছেন; সেইসঙ্গে আর যাতে না কমে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিশ্ব ব্যাংক-আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোও রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগের কথা বলছে। স্থানীয় গণমাধ্যমেও সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে অর্থনীতির এই সূচক।
এমন পরিস্থিতিতে গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন। ভারতে জি টোয়েন্টির শীর্ষ সম্মেলন এবং জাতিসংঘের ৭৮ তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবারই সাংবাদিকরা সমসাময়িক আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশ্ন রাখেন, যার ব্যতিক্রম হয়নি এদিনও।
একজন গণমাধ্যমকর্মী সরকারপ্রধানের কাছে প্রশ্ন রাখেন বাংলাদেশের ক্রমহ্রাসমান রিজার্ভ নিয়ে। রিজার্ভের পতন আর পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী- এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বলেন রিজার্ভ কমার কারণ।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাসের মহামারিতে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, রপ্তানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগ বন্ধ ছিল, যাতায়ত বন্ধ ছিল, সব কিছু বন্ধ ছিল। যার কারণে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছিল। এর পর যখন অর্থনীতি খুলে গেলে আমাদের সমস্ত জিনিস আমদানি করা শুরু হল, স্বাভাবিকভাবে রিজার্ভ কমবে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।”
দুইশ ডলারের গম ছয়শ ডলারে কিনতে হচ্ছে, আটশ ডলারের পরিবহন ব্যয় তিন থেকে চার হাজার ডলার লাগছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তার পরেও সেটা পাওয়াও যাচ্ছে না।”
দেশের মানুষকে অন্ধকারে না রেখে ‘ভালো রাখতে গিয়ে’ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে চান রিজার্ভ ধরে রাখতে গিয়ে পণ্য আমদানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে যাবেন কি না।
তিনি বলেন, “দেশের মানুষকে এখন যদি বলেন অন্ধকারে রেখে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেই? পানি দেওয়া বন্ধ করে দেই? সার বন্ধ করে দেই? তাহলে রিজার্ভ ভালো থাকবে।”
রোববার বিসিএস কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, “উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে কোনো প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করার মানসিকতা নিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। অনেক রকম প্রতিবন্ধকতা আসবে। কারণ, আমাদের শত্রু বাইরে থেকে আসতে হয় না, দেশের ভেতরেও আছে।
“মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী বা ’৭৫ এর খুনি বা তাদের সন্তান-সন্ততিরা যারা রয়েছে এরা কখনো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না বা বাধা দেবে। সেই শতবাধা অতিক্রম করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না।”
উন্নয়ন অব্যাহত রাখার পাশাপাশি তা টেকসই করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “এ জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সফলভাবে কোর্স শেষ করা ১৯টি ক্যাডার সার্ভিসের ৬০২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনের হাতে ‘মেধা সনদ’ তুলে দেন এবং তিনজনের হাতে ‘মর্যাদা পদক’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন ৫টি প্রকল্প ও কর্মসূচির আওতায় নির্মিত ভবন এবং ‘গভর্নমেন্ট এমপ্লয়মেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিইএমএস’ সফটওয়্যার উদ্বোধনও করেন।
নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০৪১ এর বাংলাদেশের মূল কারিগর এবং সৈনিক হবেন আজকের কর্মকর্তারা। তখন তো আর আমরা থাকব না। কিন্তু দেশটা যেন এগিয়ে যায়। আমি শুধু সেটাই চাই।”
কর্মকর্তাদেরকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়া এবং মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বজায় রেখে কাজ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলেন, “তাদের রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝড়ানো যে উপার্জন সেই উপার্জনের টাকা দিয়েই আমাদের সবার সবকিছু চলে। একথাটা আমাদের ভুললে চলবে না। চাকরিটা শুধু চাকরি নয়, এটা দেশের সেবা করা।
“সব সময় এটা মাথায় রাখতে হবে যে এসব খেটে খাওয়া মানুষদের কষ্টের ফসলটাই আমরা ভোগ করি। কাজেই তাদেরকে কীভাবে আমরা সহযোগিতা করতে পারি সেটাই আমাদের দেখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীও বক্তৃতা করেন।
এছাড়া ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারিদের পক্ষে চারজন শিক্ষার্থীও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে ৭৫ তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স এবং প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
কমেন্ট