বেঁধে দেওয়া দরের দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, ডিমের ডজন ১৭০ টাকা
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৭৫ টাকা।
তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারে ভালো মানের প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
গত কয়েক দিন ধরে পেঁয়াজের দর আবারও চড়তে শুরু করেছে; এক সপ্তাহের ব্যবধানেই খুচরা ও পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। ওই দিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংবাদ সম্মেলন করে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক সপ্তাহে আগে দেশি পেঁয়াজের দর ছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এক মাস আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সরকারি হিসাবেই এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এক বছর আগে যা ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা; বেড়েছে ১০৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বিক্রেতারা বলছেন দেশে বেশি চাহিদা পাবনায় উৎপাদন হওয়া পেঁয়াজের। কারওয়ান বাজারে পাইকারি দরে এ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৯২ টাকা দরে। পরিবহন খরচ ও মুনাফা মিলিয়ে খুচরায় তা গিয়ে ঠেকেছে ১২০ টাকায়।
অপরদিকে ফরিদপুর ও মাদারীপুর থেকে আসা দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল প্রতি কেজি ৮৮ টাকা; খুচরায় যা বিক্রি হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়।
সেইসঙ্গে প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা (ডজন ১৪৪ টাকা) এবং আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা, হিমাগার পর্যায়ে ২৬-২৭ টাকা বেঁধে দিয়েছিলেন। তখনই খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা।
কিন্তু এক মাসে এই তিন পণ্যের একটির দামও কমেনি; উল্টো আগের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
যখন এই তিন পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হয়, তখন দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ডিমের ডজন ছিল ১৫০ টাকা। আর আলুর কেজি ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।
টিসিবির হিসাবে, শুক্রবার প্রতি হালি ফার্মের ডিম ৫৫ টাকা (১৬৫ টাকা) এবং আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কিন্তু রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া বাজারে এক ডজন ডিম ১৭০ টাকা এবং আলু ৫০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, বেঁধে দেওয়া দরের প্রায় দ্বিগুণ দামে বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ডিম-আলুও অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের সঙ্গে সঙ্গে মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি কোনো কোনো বাজারে ২১০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। রুই, পাঙাশ ও তেলাপিয়ার দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।
পেঁয়াজ, ডিম ও আলুর পাশাপাশি বাজারে অন্য সব পণ্যের দামও আরেক দফা বেড়েছে। টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতের আগাম সবজি নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে সবজির দাম। বেশির ভাগ সবজি এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার ঢাকার এই তিন বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বেগুনের তিনটি ধরনের মধ্যে লম্বা ও সাদা বেগুন ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আর বেগুনি রঙের গোল বেগুনের দাম ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। গত এক সপ্তাহে কেবল গোল বেগুনই কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
বেগুনের দাম অতিরিক্ত বেড়েছে উল্লেখ করে শেওড়াবাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, সাদা ও লম্বা বেগুন পাইকারিতেই ১০০ টাকার মতো কিনতে হচ্ছে। আর গোল বেগুন কিনতে হচ্ছে আরও বেশি দামে।
অন্যান্য সবজির মধ্যে টমেটো ও গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। করলা, ধুন্দুল, ঝিঙে, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, কচুর মুখী, কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি।
৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে হাতে গোনা দু-একটি সবজি। এর মধ্যে পটোল ও ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। তবে বাজারে সবচেয়ে সস্তার সবজি এখন পেঁপে, প্রতি কেজির দাম পড়ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
কাঁচা মরিচের দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কমেনি, বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি।
বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, “অনেকটা অপ্রত্যাশিত বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে আগাম সবজির খেত পানির নিচে চলে যাওয়ায় সবজির সরবরাহ কমেছে। তাই দাম বাড়তির দিকে।”
কমেন্ট