‘দেশের ৪ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইউরোপের মত’
মঙ্গলবার ঢাকার কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে পাঁচ দিনের জাতীয় ফার্নিচার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এ কথা বলেন।
দেশের ৪ কোটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ইউরোপের মত বলে দাবি করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
তিনি বলেছেন, “দেশে প্রায় চার কোটি মানুষ আছেন, যাদের ক্রয়ক্ষমতা সাত হাজার কিলোমিটার দূরের `ইউরোপের বাসিন্দাদের মতন।”
“আমাদের দেশেও কিন্তু একটা অ্যাভেইল পিপল উচ্চবিত্ত হয়েছে। যেটা বলা হয়, আমাদের সতের কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় চার কোটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ইউরোপের মানুষের সমান।”
মঙ্গলবার ঢাকার কুড়িলে বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে পাঁচ দিনের জাতীয় ফার্নিচার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তার যুক্তি, দেশেই যেহেতু `ইউরোপের মানুষের মত’ বিপুল সংখ্যক নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা তৈরি হয়েছে, সেহেতু তাদের জন্য ইউরোপীয় মানের আসবাবপত্র বানাতে পারেন ব্যবসায়ীরা।
“এই চার কোটি মানুষ কিন্তু দাম দেবে, ভালো জিনিসপত্র কিনতে পারবে।”
বাণিজ্যমন্ত্রী এও বলেন, “গত ১০-১২ বছরে বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখন আমাদের দেশে এত মানসম্পন্ন ফার্নিচার তৈরি হচ্ছে যে বিদেশ থেকে তেমন একটা আমদানি করতে হয় না।”
তাতে বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি এখন ফার্নিচার রপ্তানির দিকে মনোযোগী হতে ব্যবসায়ীদের তাগিদ দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ফার্নিচার খাত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একটি শক্তিশালী খাতে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের ফার্নিচারের যে কোয়ালিটি, ডিজাইন, আধুনিকতা তা বিশ্বের যেকোনো দেশেরই নজর কাড়বে এবং নিতে আগ্রহী হবে।
“তৈরি পোশাক শিল্প খাত আজকে যে অবস্থানে এসেছে এটি একদিনে হয়নি। বর্তমানে ফার্নিচার থেকে ১১০-১২০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হচ্ছে বলে যে তথ্য দিচ্ছেন তা এই অবস্থায় থাকবে না।
”এই খাতে বিগত ১০-১২ বছরে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তাতে খুব শিগগিরই রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে।”
মন্ত্রী বলেন, টেকসই ফার্নিচার শিল্প গড়ে তুলতে পারলে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। যে পরিমাণ শ্রমিক এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তা দ্বিগুণ করা সম্ভব। ফার্নিচার তৈরিতে যেসব উপাদান আমদানি করতে হয় সেগুলো দেশেই উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
“ফার্নিচার শিল্পের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী করার উদ্যোগ নিচ্ছে যা সত্যিই প্রসংশনীয়। এই খাত অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।”
টিপু মুনশি বলেন, “এই মেলায় দেশি ক্রেতা আসবে। কিন্তু বিদেশি ক্রেতাদের জন্য কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”
ভবিষ্যতে বিদেশি ক্রেতা আনার উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি বাজারে যাতে দেশি উদ্যোক্তারা দাঁড়াতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনে এ খাতে কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড বা করমুক্ত সুবিধা সরকার বিবেচনা করবে
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “আমাদের ফার্নিচার খাত যদি ‘বেশি বিক্রি, কম লাভ’ভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা করে, তাহলে এই খাতের বিশাল সম্ভাবনা আছে। কারণ এটিও পোশাকখাতের মত একটি শ্রমঘন শিল্প।
“আমাদে যেহেতু বিশাল শ্রম শক্তি আছে; সেসব শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে চীনের সাথেও প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা আমাদের আছে।”
অন্যদের মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এইচ এম আহসান, ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম এইচ রহমান, মহাসচিব ইলিয়াস সরকার, ফার্নিচার রপ্তানি সমিতির সভাপতি কে এম আকতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এ মেলায় দেশের শীর্ষ ৩০টি কোম্পানি ৮৬টি স্টলে পণ্য প্রদর্শন করছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিনা টিকেটে মেলা পরিদর্শন করতে পারবেন ক্রেতারা।
কমেন্ট