‘ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশি বিনিয়োগ কমছে’
গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৮ দশমিক শুন্য চার শতাংশ। আর পৌনে দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ।
পৌনে দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ডলারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে বলে জানিয়েছেন বিডার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী চেয়ারম্যান মহসিনা ইয়াসমিন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “চলতি অর্থবছরে গতকাল পর্যন্ত (শুক্রবার) দেশে ৯০ কোটি ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলারের দাম অস্থিতিশীল থাকায় বিদেশি বিনিয়োগ আগের তুলনায় কম।”
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মহসিনা ইয়াসমিন এ তথ্য দেন।
এফআইসিসিআই প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পূর্তিতে আগামী ৮ ও ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ মেলা ২০২৩ উপলক্ষ্যে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ঢাকায় র্যাডিসন হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার উদ্বোধন করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
গত ৭ জুলাই বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন ২০২৩–এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে এফডিআই কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে। গত বছর দেশে এফডিআই প্রবাহ ২০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪৮ কোটি (৩.৪৮ বিলিয়ন) ডলার। যা ছিল ১৯৯০ সালের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এফডিআই। দেশে গত ৩৩ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৩৬১ কোটি (৩.৬১ বিলিয়ন) ডলারের এফডিআই আসে।
গত বছর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে এফডিআইপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। সামগ্রিকভাবে গত বছর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোয় যেখানে এফডিআই প্রবাহ ১৬ শতাংশ কমেছিল, সেখানে বাংলাদেশে ২০ শতাংশ বেড়েছিল।
সব এলডিসির পাওয়া মোট এফডিআইয়ের ৭০ শতাংশই পেয়েছিল মাত্র ৫টি দেশ। এর মধ্যে তৃতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ। বাকি চার দেশ হলো ইথিওপিয়া, কম্বোডিয়া, সেনেগাল ও মোজাম্বিক।
দেশে ২০২০ সালে এফডিআই হ্রাসের পর ২০২১ সালে আবার বাড়ে, যা পরের বছরও বজায় থাকে। ২০২১ সালে দেশে এফডিআই এসেছিল ২৮৯ কোটি ডলার।
অন্য বছরগুলোর মধ্যে দেশে ২০১৫ সালে ২২৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে ২৩৩ কোটি ডলার, ২০১৭ সালে এসেছিল ২১৫ কোটি ডলার ও ২০১৯ সালে ২৮৭ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।
গত বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। এক বছর আগে ১৮ অক্টোবর ছিল ১০২ টাকা ২৭ পয়সা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। পাগলা ঘোড়ার মত ছুঁটতে থাকে ডলারের দর।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালায়, সেদিন টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৮ দশমিক শুন্য চার শতাংশ। আর পৌনে দুই বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বিডার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে এবং ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ওয়ান স্টপ সেবা চালু করা হয়েছে। এখানে এক সঙ্গে ৯০ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি ও কস্ট দুটো থেকেই রেহাই পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “বিডা দীর্ঘসময় ধরে এফআইসিসিআই-এর সঙ্গে এফডিআই প্রচারণা এবং দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করতে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এফআইসিসিআই-এর এই মেগা ইভেন্টের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
“বিদেশি বিনিয়োগ যে কোনো দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ সরকারও সর্বদা একে স্বাগত জানিয়ে আসছে। এই ইভেন্টটি দেশে বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে এবং আগামীতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে বলে আমার বিশ্বাস।”
সংবাদ সম্মেলনে এফআইসিসিআই সভাপতি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “বাংলাদশে বিনিয়োগের এখন উত্তম সময়। বিদেশিরা এখন বাংলাদেশের বিনিয়োগে আগ্রহী। তারা দেখছেন; সময় সুযোগ বুঝে বিনিয়োগ করছেন।”
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নায়নে এফআইসিসিআই-এর ভূমিকা তুলে ধরাই এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য। সেই সাথে দেশের বিনিয়োগবান্ধব ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরিতে নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের সদস্যদের অবদান তুলে ধরা হবে। সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের গল্পগুলো উঠে আসবে এই আয়োজনে।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, এফআইসিসিআই সিনিয়র সহসভাপতি নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীপাল আবেইউক্রেমা, এফআইসিসিআই পরিচালক এবং ৬০ বছর উদযাপনের আহ্বায়ক এইচএসবিসি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব উর রহমান এবং নির্বাহী পরিচালক টি.আই.এম. নুরুল কবির প্রমুখ।
মাহাবুব উর রহমান বলেন, “দুই দিনব্যাপী বিনিয়োগ মেলায় দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা ও খাতভিত্তিক বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরা হবে। আমাদের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ৪০টি স্টলে তাদের নতুন উদ্ভাবন, পরিষেবা এবং পণ্য নিয়ে এক্সপো তে অংশগ্রহণ করবে।”
“আশা করছি, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, উন্নয়ন অংশীদার, থিংক ট্যাংক, স্টেকহোল্ডার, দেশীয় কর্পোরেট কর্মকর্তারা এই মেলা পরিদর্শন করবেন।”
তিনি বলেন, “বিনিয়োগ মেলায় আমরা ‘গ্রিন ভ্যালু চেইন’ এবং ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট কারেন্ট ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড মিশন ২০৪১ বিষয়ের ওপর দুটি প্ল্যানারি সেশনের আয়োজন করছি। যেখানে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে বিশেষজ্ঞারা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।”
কমেন্ট