ভোটের আগে এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা

ভোটের আগে এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা

জুলাই-সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে এডিপির টাকা কম খরচের ঘটনা কেবল একবারই ঘটেছিল; করোনা মহামারির প্রথম বছরে।

নির্বাচনের আগে সরকার একটার পর একটা উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সোমবার এডিপি বাস্তবায়নের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়,২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সরকারের এডিপি বাস্তবায়ন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে।

এই তিন মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৬০৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ২১ হাজার ৮৯৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

সরকারের এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণত এমন ঘটনা খুবই কম ঘটে। প্রতি বছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ে। সেই অনুযায়ী খরচও বাড়ে।

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বর—এই তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। আগের বছরের চেয়ে এডিপির টাকা কম খরচের ঘটনা কেবল একবারই ঘটেছিল; করোনা মহামারির প্রথম বছরে।

আইএমইডি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতকরা হিসাবে এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে মোট এডিপির মাত্র ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

আগের ছয় অর্থবছরের কোনোবারই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি ৮ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়নি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক ২৬ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৮ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও এই হার ছিল একই— ৮ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।

এই তিন মাসে খরচ হওয়া টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসের ১২ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ৫৭২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের এডিপি আকার হচ্ছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। আর এতে মোট প্রকল্প সংখ্যা হলো ১ হাজার ৩৯২টি।

সবশেষ সেপ্টেম্বর মাসে মোট এডিপির ১০ হাজার ৬৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যয় হয়েছিল এর চেয়ে বেশি ১২ হাজার ৫১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে ছিল ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে আছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের ২১ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এই বিভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণলয় ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।

এছাড়া সুরক্ষা সেবা বিভাগ মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ১২ দশমিক ২২ শতাংশ খরচ করেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ, বিদুৎ বিভাগ ৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ খরচ করেছে।

এছাড়া সেতু বিভাগ ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ২১ শতাংশ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ মোট বরাদ্দের ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ খরচ করেছে।

পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি: শ্রমিকদের অর্ধেক প্রস্তাব মালিকদের পরবর্তী

পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি: শ্রমিকদের অর্ধেক প্রস্তাব মালিকদের

কমেন্ট