মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরী বোর্ডের সভা চলাকালে বোর্ডের নিচে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন বিক্ষোভ করে। ছবি: এআরএইচ ডট নিউজ

পোশাক শ্রমিকদের মূল মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ১২ হাজার টাকা সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারণ করেছে সরকার, যা আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করেন।

তার আগে শ্রম ভবনে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে গঠিত বোর্ডের ষষ্ঠ সভায় এই মজুরি চূড়ান্ত করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে তার দপ্তরে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমরা এটা ঘোষণা করছি। ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে। আট হাজার টাকা থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা হবে। সঙ্গে বছরে পাঁচ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে।”

এদিকে বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা মঙ্গলবারও গাজীপুরে দুই বাসে আগুন দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।

মঙ্গলবার মজুরী বোর্ডের সভা চলাকালে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের বিক্ষোভ করেছে।

বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মজুরি বোর্ডের সভাকক্ষে এ সভা হয়। এতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন সিরাজুল ইসলাম রনি। অন্যদিকে মালিকদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি ছিলেন পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ, নিরপেক্ষ সদস্য অধ্যাপক কামাল উদ্দীন এবং শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহম্মদ।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করা হল। দীর্ঘ দিন শ্রমজীবী মানুষ আন্দোলন করে আসছে মজুরি বৃদ্ধির জন্য।

“মালিকদের বলব ফ্যাক্টরি খুলে দেবেন, শ্রমিকদের বলব কাজে যোগদান করতে।”

সবশেষ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পাঁচ বছরের জন্য পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি ঘোষণা করে সরকার। সে অনুযায়ী আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে নতুন মজুরি ঘোষণা করার দাবি ছিল শ্রমিকদের।

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঠিক করতে গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর এই বোর্ডের চতুর্থ সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেন। আর মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়।

ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে– এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরে আন্দোলন শুরু করেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে তা আশুলিয়া, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে ছড়িয়ে পড়ে।

অনেক জায়গায় শ্রমিকরা ভাংচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সংঘাতে এবং এক কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় প্রাণ যায় অন্তত দুইজনের। পরিস্থিতি সামাল দিতে পর্যায়ক্রমে পাঁচ শতাধিক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বেতন বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত পোশাক শ্রমিকরা মঙ্গলবারও গাজীপুরে দুই বাসে আগুন দিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন।