ঘোষিত মজুরিতেই পোশাকশ্রমিকদের কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ঘোষিত মজুরিতেই পোশাকশ্রমিকদের কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি-ফোকাস বাংলা

পোশাক শ্রমিকদের জন্য যে মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়েই তাদের কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, পোশাকশ্রমিকদের মজুরি দফায় দফায় বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এবার ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। শতকরা ৫৬ ভাগ বাড়ানো হয়েছে।

“আন্দোলনের নামে ১৯টি কারখানা ধ্বংস করা হয়েছে। যারা তাদের (শ্রমিক) উস্কানি দিচ্ছে, তারাই তাদের ধ্বংস করবে। এটা শ্রমিকদের বুঝতে হবে। বর্তমান মজুরি নিয়েই পোশাকশ্রমিকদের কাজ করতে হবে।”

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রায় তিন মাস পর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হচ্ছে। চলতি বছর ১২ আগস্ট সর্বশেষ বৈঠক হয়। এবারের বৈঠকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নানান উপ-কমিটি গঠন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলায় কৌশল নির্ধারণ এবং সমসাময়িক বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখনই সময় আসে তাদের সবরকম সুবিধা আমরা করে দেই। কিন্তু তারা যদি সেটা না করে, কারও প্ররোচনায় রাস্তায় নামে, তখন যারা তাদের উস্কানি দিচ্ছে তারাই তাদের (শ্রমিকদের) লাশ ফেলবে। এরাই এমন অবস্থা সৃষ্টি করবে যে, তারা (শ্রমিকরা) চাকরি হারাবে, কাজ হারাবে, গ্রামে যেয়ে পড়ে থাকতে হবে।”

সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারে বিশ্বাস করি। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই বার বার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে। ৭৫-এর পর অস্ত্রের জোরে যেসব সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা সন্ত্রাস ও লুটপাট ছাড়া জনগণকে কিছুই দিতে পারেনি।”

এসময় আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি–জামায়াতের কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেন, “পুলিশ হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে হামলা এসব যারা করে তাদের আটক করা হবে না তো কী করা হবে? যারা এসব সন্ত্রাস করবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আন্দোলনের নামে আবার আগুনে মানুষ পোড়ানো শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। এদের প্রতি শুধুই ঘৃণা। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন, আওয়ামী লীগের অপরাধ কী? সরকারকে কী কারণে পদত্যাগ করতে হবে? আমরাতো ওদের মতো আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারি না।”

তিনি বলেন, “সার, বিদ্যুৎসহ অনেক খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। বিনামূল্যে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশ এ সুবিধা দিয়েছে?”

গত মঙ্গলবার মজুরি বোর্ড তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে।

কিন্তু সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির এ সিদ্ধান্ত মানছেন না পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশ।

ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা করার দাবি জানিয়ে দেশের পোশাকশ্রমিকেরা আন্দোলন করে আসছেন। ২১ অক্টোবর থেকে এ দাবিতে তারা সড়কে নামেন।

মালিকপক্ষ প্রথমে ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।

এ নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের কয়েকটি শিল্পাঞ্চলে পুলিশ ও তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে অন্তত দুইজন নিহত এবং প্রায় ৪০ জন আহত হয়।

এরপর গত ১ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাবিত ১০ হাজার ৪০০ টাকা থেকে আরও বাড়াতে রাজি হন কারখানা মালিকেরা।

মঙ্গলবার বৈঠকে বসে অবশেষে নতুন সর্বনিম্ন মজুরি চূড়ান্ত করে মজুরি বোর্ড।

২০১৩ সালে পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ৭৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করেছিল নিম্নতম মজুরি বোর্ড। এরপর ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে প্রায় ৫১ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকা করা হয়।

সরকারের শেষ একনেকে ৪৪ প্রকল্প অনুমোদন পরবর্তী

সরকারের শেষ একনেকে ৪৪ প্রকল্প অনুমোদন

কমেন্ট