প্রতিটি ট্রাকে ৩০০ মানুষের জন্য পণ্য থাকবে, অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার ক্রেতা এসব ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। এরপর পণ্যের জোগান বাড়লে ট্রাকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকা শহরে মঙ্গলবার থেকে ২৫-৩০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করবে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। ফ্যামিলি বা পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি হবে না; বরং যারা আসবেন, তারাই এই পণ্য পাবেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

একজন ক্রেতা দুই কেজি মসুরের ডাল, দুই কেজি সয়াবিন তেল, দুই কেজি আলু ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। পেঁয়াজ বিক্রি হবে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও মসুর ডাল ৭০ টাকায়, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১০০ টাকায়।

সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দেশের সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। সেখানে তিনি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করার কথা জানান।

সরকারিভাবে যেসব পণ্য বিক্রি করা হবে, বাজারে সেসব পণ্যের দাম সম্প্রতি বেশ বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম সরকার বেঁধে দিলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্রতিটি ট্রাকে ৩০০ মানুষের জন্য পণ্য থাকবে, অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ৯ হাজার ক্রেতা এসব ট্রাক থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন। এরপর পণ্যের জোগান বাড়লে ট্রাকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

“তবে কাল (মঙ্গলবার) পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আরও দু-তিন দিন সময় লাগতে পারে।”

ফ্যামিলি বা পরিবার কার্ড জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় অনেকে থাকেন, পরিচয়পত্রে গ্রামের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করার কারণে তারা পরিবার কার্ড পাননি। সেই মানুষের কথা চিন্তা করে এই উন্মুক্ত ট্রাকে পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

সংবাদ সম্মেলনে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমাতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। বলেন, “ডিম ও আলু আমদানির পর দাম কমেছে। গতকাল রোববার পর্যন্ত ১০ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন আলু আমদানি হয়েছে। ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ২৫ কোটি, যদিও আমদানি হয়েছে ৬২ হাজার পিস।”

আরও ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণে ডিম আমদানিতে সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।

তপন কান্তি ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী আলুর দাম আরও কমাতে জেলা প্রশাসন থেকে একজন কর্মকর্তা কোল্ড স্টোরেজে রাখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যার উপস্থিতিতে আলু সরকারি নির্ধারিত মূল্যে অর্থাৎ ২৭ টাকা কেজিতে পাইকারি বিক্রি হবে। খুচরা পর্যায়ে যেন তা ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়, তা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষণ করবে জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার।”

“সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিমের দাম কমানো, আমদানি নয়। এখন বাজারে দাম কমে গেলে আমদানিকারকেরা উৎসাহিত নাও হতে পারেন, কিন্তু বাজারে দাম ঠিক থাকলে সেটা সমস্যা হবে না।”

‘দাম যত দিন স্থিতিশীল না হয়, তত দিন আমদানি চলবে’ জানিয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চিনি ও তেল আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে যেন ডলারের সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

“টিসিবির পণ্য আমদানির এলসি মূলত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়। সে জন্য সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডিকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”