সহিংস রাজনীতি অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে: এফবিসিসিআই
দুই বছরের করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটতে না কাটতেই পৌনে দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সংকটে আছে দেশের অর্থনীতি। ফের হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়াবে। ফাইল ছবি: ২৮ অক্টোবর
রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি দেশের সরবরাহ ব্যবস্থাকে বিঘ্নিত করছে। যার প্রভাব পণ্যের উৎপাদন, বাজারমূল্য এবং রপ্তানি ও সেবা খাতের ওপরও পড়ছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলমসহ অন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
ডলার–সংকটের সমাধান ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংককে কার্যকর ভূমিকা নিতে বলেছেন এই ব্যবসায়ী নেতারা। কারখানায় উৎপাদনব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে এফবিসিসিআইয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা ও অর্থনীতিবিদেরা অংশ নেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন মাহবুবুল আলম। সভায় বর্তমান রাজনৈতিক সহিংসতা, ডলার–সংকট, মূল্যস্ফীতি, আমদানি নিয়ন্ত্রণ, ব্যাংকঋণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
মাহবুবুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা অর্থনীতিকে শঙ্কার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে। একই সঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। জাতীয় অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরণের সহিংস কর্মকান্ড পরিহারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
“দুই বছরের করোনা মহামারীর ধাক্কা কাটতে না কাটতেই পৌনে দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এমনিতেই সংকটে আছে দেশের অর্থনীতি। ফের হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও অর্থনীতিতে সংকট আরও বাড়াবে।”
রাজনৈতিক দলগুলোকে দেশের অর্থনীতির স্বার্থে সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড পরিহারের আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, কয়েক বছর ধরে দেশে অত্যন্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করছে, যা ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য জরুরি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে। তৈরি পোশাক খাতেও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের বিতর্কিত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার করতে এফবিসিসিআই কমিটি গঠন করতে পারে। বিদ্যমান সহিংস কর্মসূচির বিরুদ্ধে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এফবিসিসিআইয়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের ওপর চাপ কমাতে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য কম পরিমাণে আমদানি করতে হবে।
আরেক সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বর্তমান সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারাদেশের সকল চেম্বার, অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসায়ী সংহতি সমাবেশ আয়োজনের জন্য এফবিসিসিআইর বর্তমান নেতৃত্বকে পরামর্শ দেন।
সম্প্রতি তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্ট সহিংস ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত উল্লেখ করে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “প্রকৃত শ্রমিকরা কখনও নিজ কারখানায় আগুন দিতে পারে না। উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৈরি পোশাক খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, বর্তমান সহসভাপতি আমিন হেলালী, খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি সামির সাত্তার, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি সায়ফুল ইসলাম, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
কমেন্ট