৪ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ১১.৫৪%, ৮ বছরে সর্বনিম্ন
জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে এডিপি বরাদ্দ থেকে মোট খরচ হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এই হিসাব বলছে, এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে।
ডলার সাশ্রয় ও খরচ কমানোর সরকারি পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে চলমান বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) কার্যক্রমে; চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মোট এডিপির মাত্র ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। এই চার মাসে বিগত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বৃহস্পতিবার এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশে করেছে।
তাতে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে মোট খরচ হয়েছে ৩১ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৩২ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।
এই হিসাব বলছে, জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে।
সরকারের এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণত এমন ঘটনা খুবই কম ঘটে। প্রতি বছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ে। সেই অনুযায়ী খরচও বাড়ে।
সেই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা। আর মোট প্রকল্পের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৩৯২।
গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
আইএমইডি’র তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের তুলনায় টাকা কম খরচের ঘটনা এর আগে কোভিডের প্রথম বছরে ঘটেছিল। গত চার মাসই এমনটা ঘটেছে।
সবশেষ অক্টোবর মাসে মোট এডিপির ১১ হাজার ৮৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ৪ দশমিক শূন্য চর শতাংশ।
গত বছরের অক্টোবরে ব্যয় হয়েছিল ১০ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। শতাংশ হিসাবে ছিল ৪ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ।
এক টাকাও খরচ করতে পারেনি দুটি সংস্থা
জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ৫ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় চার মাসেও তাদের বরাদ্দের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি।
এবারের এডিপিতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ৬টি প্রকল্পের অনুকূলে ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। আর সরকারি কর্ম কমিশনের একটি প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
৫ শতাংশের কম অর্থ খরচ করেছে এ রকম মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো নৌ পরিবহন, প্রতিরক্ষা, ভূমি, পররাষ্ট্র ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৮ বছরে সর্বনিম্ন
আট বছরের মধ্যে এবারেই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সবচেয়ে কম এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সময় এডিপি বাস্তবায়নের হার হলো ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গতবার একই সময়ে এ হার ছিল ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
প্রথম চার মাস বিবেচনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে।
এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর এর চেয়ে কম হারে এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড রয়েছে। ওই অর্থবছর বাস্তবায়নের হার ছিল ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
জুলাই-অক্টোবর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎসের ১৮ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের ১১ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের এডিপির আকার ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা।
বাস্তবায়নের শীর্ষে যে সব মন্ত্রণালয়-বিভাগ
এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-অক্টোবর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে আছে সুরক্ষা বিভাগ; মোট বরাদ্দের ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এই বিভাগ।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণলয় বাস্তবায়ন করেছে ২৫ শতাংশ। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় খরচ করেছে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
রেলপথ মন্ত্রণালয় ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ১৯ দশমিক ৯০ শতাংশ খরচ করেছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, বিদুৎ বিভাগ ১০ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৭ দশমিক ৫৮শতাংশ খরচ করেছে।
এছাড়া সেতু বিভাগ ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, খাদ্য বিভাগ ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ২২ শতাংশ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্ত বিভাগ ২২ দশশিখ শূন্য চার শতাংশ এবং জননিরাপত্তা বিভাগ মোট বরাদ্দের ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ খরচ করেছে।
কমেন্ট