৫ প্রকল্পে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক, চুক্তি সই
শৈশব বিকাশ, মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন, নদী তীর সুরক্ষা, শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের উন্নয় এবং গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা দক্ষতার জন্য এই পাঁচ প্রকল্পে মোট ১১১ কোটি ২০ লাখ (১.১১ বিলিয়ন) ঋণ দেবে সংস্থাটি।
বাংলাদেশের পাঁচ উন্নয়ন প্রকল্পে ১ বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলারের বেশি ঋণ দেবে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক।
শৈশব বিকাশ, মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন, নদী তীর সুরক্ষা, শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যের উন্নয় এবং গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা দক্ষতার জন্য এই পাঁচ প্রকল্পে মোট ১১১ কোটি ২০ লাখ (১.১১ বিলিয়ন) ঋণ দেবে সংস্থাটি।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১১ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১২ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানব উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সহনশীলতা তৈরির মাধ্যমে অন্তুর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যে এ-সংক্রান্ত আলাদা পাঁচটি চুক্তি সই হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ইআরডি সচিব শরিফা খান ও বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক চুক্তিতে সই করেন বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
আবদুলায়ে সেক বলেন, দারিদ্রমুক্ত করতে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে বিশ্বব্যাংক এবং বাংলাদেশ এক হয়ে কাজ করছে।
“বিশ্বব্যাংক দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে চায়; সেই ধারাবাহিকতায় লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দারিদ্র্য থেকে বের করে এনেছে। এই প্রকল্পগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বাচ্চাদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কাজ করবে।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চুক্তি হওয়া পাঁচ প্রকল্পের মধ্যে ‘বাংলাদেশ এনহ্যান্সিং ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড বেনিফিটস ফর আর্লি ইয়ারস’ প্রকল্পে ২১ কোটি ডলার দেবে সংস্থাটি। ঝুঁকিপূর্ণ বা দারিদ্র পরিবারের ১৭ লাখ গর্ভবতী নারী এবং ৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের মায়েদের নগদ অর্থ দেয়া হবে। এসব কাউন্সেলিং পরিষেবা দেয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক শৈশব বিকাশের উন্নতিতে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক।
‘লার্নিং এক্সিলারেশন ইন সেকেন্ডারি এডুকেশন অপারেশন’ প্রকল্পে ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। শিক্ষার মান উন্নত করে মাধ্যমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি।
কোভিড-১৯ চলাকালীন শিক্ষার ক্ষতি পুনরুদ্ধার করতে এবং ভবিষ্যতের ধাক্কাগুলো মোকাবিলার জন্য প্রকল্পটি সহায়ক হবে। প্রকল্পটি ক্লাসের শিক্ষার সঙ্গে অনলাইন শিক্ষার প্রবর্তন করবে। ঝরে পড়ার হার কমাতে এই প্রকল্পের আওতায় ৮০ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হবে।
যমুনা নদী টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। যমুনা নদীতে নদীতীর সুরক্ষা এবং নাব্যতা উন্নত করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। নদীতীর ক্ষয় এবং বন্যা থেকে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমি রক্ষা করবে। এছাড়া হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুতি থেকে বাঁচাবে প্রকল্পটি।
নদীতীরের বাসিন্দাদের জীবিকা ও সম্পদ রক্ষা করবে। নদীর পর্যাপ্ত গভীরতার সঙ্গে নেভিগেশন চ্যানেলগুলোকে উন্নত করবে; যা সারা বছর বড় কার্গো জাহাজগুলোকে চলাচল করতে সহায়তা করবে। অভ্যন্তরীণ পানি পরিবহন ও বাণিজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করবে এই নৌপথ।
এছাড়া নগর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা উন্নয়ন প্রকল্পে ২০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক। প্রকল্পটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, সাভার ও তারাবো পৌরসভায় বাস্তবায়িত হবে। ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগসহ সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসা, প্রতিরোধের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা উন্নত করবে।
মশা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এবং আচরণ পরিবর্তন যোগাযোগকেও সহায়তা করবে। এটি নারীদের জন্য প্রসবপূর্ব পরিষেবাগুলো উন্নত করতে সাহায্য করবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, প্রি-পেইড মিটারিং সিস্টেমের মাধ্যমে গ্যাস বিতরণ খাতে ৩০ কোটি ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক। গ্যাস ব্যবহারে দক্ষতা উন্নত করতে এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারে আরও শক্তিশালী করবে। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ১২ লাখের বেশি প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।
এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রিপেইড গ্যাস মিটার এবং উন্নত মনিটরিং সিস্টেমে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং গৃহস্থালি ও শিল্প ব্যবহারকারীদের জন্য গ্যাস বিল কমাতে প্রকল্পটি অবদান রাখবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।
কমেন্ট