পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকাই চূড়ান্ত
চূড়ান্ত মজুরি নির্ধারণে ৪ ও ৩ নম্বর গ্রেডকে একীভূত করে ৩ নম্বর গ্রেড করা হয়েছে, এই গ্রেডে আগে ১৩ হাজার ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নতুন করে তা ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা করা হয়েছে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকাই চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে উপরের দিকের গ্রেডগুলোতে সামান্য বাড়ানো হয়েছে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান গত ৮ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের জন্য সাড়ে ১২ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেন। শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন তা প্রত্যাখ্যান করে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।
ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি প্রত্যাখ্যান করে গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার গার্মেন্ট কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শ্রমিক বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এর ফলে অনেক কারখানা বন্ধ করে দেন মালিকরা।
পরে অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সব শ্রমিক কাজে যোগ দেন।
এ পরিস্থিতিতে রোববার সচিবালয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের সপ্তম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকাই চূড়ান্ত ঘোষণা করেছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।
এর আগে পাঁচটি গ্রেডের মধ্য সর্বনিম্ন গ্রেডে বা ন্যূনতম মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৫০০ টাকা। শ্রমিক অধিকার সংগঠনগুলো এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করে, এবং শ্রমিকদের একটি অংশ রাস্তায় নামে। বিক্ষোভের সময় 'পুলিশের সাথে সংঘর্ষে' ২ জনসহ মজুরি আন্দোলনে মোট চারজন নিহত হন।
চূড়ান্ত মজুরি নির্ধারণে ৪ ও ৩ নম্বর গ্রেডকে একীভূত করে ৩ নম্বর গ্রেড করা হয়েছে, এই গ্রেডে আগে ১৩ হাজার ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও নতুন করে তা ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা করা হয়েছে। দ্বিতীয় গ্রেডে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ২৭৩ টাকা আর প্রথম গ্রেডে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার ৩৫ টাকা করা হয়েছে।
১৩ নভেম্বর ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রেডের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে পাঁচে কমিয়ে এনে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গেজেট প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য আপত্তি থাকলে তা জমা দিতে বলে।
ঘোষিত মজুরি পুন:মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন পক্ষ থেকে ১৯৪টি চিঠি আসে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে। এসব চিঠির মধ্যে ১৬৮টি আসে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। এসব সংগঠন ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির সুপারিশ করা হয়।
অন্যদিকে ২৩টি কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে দেওয়া চিঠিতে ন্যূনতম মজুরি কমিয়ে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারশি করা হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান মালিক পক্ষের দেওয়া প্রথম প্রস্তাব ১০ হাজার ৪০০ টাকায় ফিরে যাওয়ার সুপারিশ করে।
তবে সবকিছু বিবেচনা করে এ খাতের মজুরি নির্ধারণে সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ডের শেষ সভায় চুড়ান্ত মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা দেওয়া হয়।
ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের রোববারের সভায় উপস্থিত ছিলেন বোর্ডে পোশাক কারখানা মালিকদের প্রতিনিধি ও পোশাক শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, পোশাক শ্রমিকদের প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ জাতীয় পোশাক শ্রমিক লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি প্রমুখ।
কমেন্ট