আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পেল বাংলাদেশ
বৈঠকের সিদ্ধান্তের হওয়ার পরপরই দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে (হিসাবে) ঢুকেছে বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের বহুল প্রতিক্ষিত দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির সদর দপ্তরে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তির ঋণের অর্থ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরপরই দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশের অ্যাকাউন্টে (হিসাবে) ঢুকেছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানিয়েছেন।
এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড আমাদের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে তারা সেই অর্থ আমাদের অ্যাকউন্টে স্থানান্তর করেছে। এতে আমাদের রিজার্ভ বেড়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের ৮০ কোটি (৪০ +৪০ কোটি) ডলার পাবো। তাতে রিজার্ভ আরও বাড়বে।”
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। অনুমোদনের দুই দিনের মাথায় ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করে সংস্থাটি; যোগ হয় রিজার্ভে।
গত অক্টোবরে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে ঋণ কর্মসূচি পর্যালোচনার পর আইএমএফ বোর্ডের কাছে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির প্রস্তাব উপস্থাপন করে। মঙ্গলবার সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
ঋণ কর্মসূচির আওতায় দেওয়া শর্ত অনুযায়ী বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব না হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছিল অক্টোবরে ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ মিশন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’রিজার্ভ দাবি করছে।
গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’ রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে।
এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
আইএমএফ দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ অনুমোদন দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমরা নিশ্চিত ছিলাম আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ বোর্ড সভায় অনুমোদন হবে। এখন আমাদের রিজার্ভ বাড়বে।”
তিনি বলেন, “রেমিটেন্সের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ডলারের দর ৭৫ পয়সা কমেছে। আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে চলতি মাসেই আরও প্রায় ৮০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে।”
“সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই দেড় বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সব অর্থ যোগ হলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বেড়ে ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। তাতে ডলার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে; অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে।”
কমেন্ট