ভোটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে মন্থরগতি

ভোটের কারণে এডিপি বাস্তবায়নে মন্থরগতি

জুলাই-নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। এর আগে আগের বছরের চেয়ে এডিপির টাকা কম খরচের ঘটনা কেবল একবারই ঘটেছিল; করোনা মহামারির প্রথম বছরে।

নির্বাচনের আগে সরকার একটার পর একটা উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করলেও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে মন্থরগতি দেখা দিয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সোমবার এডিপি বাস্তবায়নের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়,২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে অর্থাৎ জুলাই-নভেম্বর সময়ে সরকারের এডিপি বাস্তবায়ন গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা কম খরচ হয়েছে।

এই পাঁচ মাসে এডিপি বরাদ্দ থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। গত ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ৪৭ হাজার ১২২ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সরকারের এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণত এমন ঘটনা খুবই কম ঘটে। প্রতি বছরই সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি তথা এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ে। সেই অনুযায়ী খরচও বাড়ে।

সেই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

কিন্তু জুলাই-নভেম্বর—এই পাঁচ মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে কম খরচ হয়েছে। এর আগে আগের বছরের চেয়ে এডিপির টাকা কম খরচের ঘটনা কেবল একবারই ঘটেছিল; করোনা মহামারির প্রথম বছরে।

আইএমইডি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শতকরা হিসাবে এবার এডিপি বাস্তবায়নের হার গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে মোট এডিপির মাত্র ১৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।

আগের পাঁচ অর্থবছরের কোনোবারই অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি ১৭ শতাংশের কম বাস্তবায়ন হয়নি।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও এই হার ছিল ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এই পাঁচ মাসে খরচ হওয়া টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসের ২৭ হাজার ২৯১ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের (প্রকল্প সাহায্য) ১৮ হাজার ২৩ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা হলো ১ হাজার ৩৯২টি।

সবশেষ নভেম্বর মাসে মোট এডিপির ১৫ হাজার ১৬৫ কোটি ১২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। শতাংশ হিসাবে যা ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

গত বছরের নভেম্বরে ব্যয় হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। শতাংশ হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নের হার কম হওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মূলত নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেছেন, নির্বাচনের কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। এ ছাড়া যেসব নতুন প্রকল্প পাস হয়েছে, সেগুলোতে নির্বাচন কমিশনের বিধিমালা অনুযায়ী বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে।

এডিপি বাস্তবায়নের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, জুলাই-নভেম্বর সময়ে ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরাদ্দের ১০ শতাংশ টাকাও খরচ করতে পারেনি। এর মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের একটি প্রকল্পে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত পাঁচ মাসে তারা এক টাকাও খরচ করতে পারেনি।

নিজেদের প্রকল্পে বরাদ্দের ১০ শতাংশেরও কম অর্থ খরচ করা অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো রেল মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে এগিয়ে আছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের ৩৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে এই বিভাগ। দ্বিতীয় অবস্থানে সুরক্ষা বিভাগ—২৪ দশমিক শূন্য এক শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। তৃতীয় অবস্থানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ— ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।

এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়—২৭ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণলয় ২৬ দশমিক ১৭ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে, রেলপথ মন্ত্রণালয় ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ২৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ খরচ করেছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ, বিদুৎ বিভাগ ২০ দশমিক ২১ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ১২ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ খরচ করেছে।

এছাড়া সেতু বিভাগ ২০ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ৪১ শতাংশ খরচ করেছে।

১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ: বিশ্বব্যাংক পূর্ববর্তী

১২ বছরে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ: বিশ্বব্যাংক

৬ বছরে মানুষের গড় আয় দ্বিগুণ হয়েছে: বিবিএস পরবর্তী

৬ বছরে মানুষের গড় আয় দ্বিগুণ হয়েছে: বিবিএস

কমেন্ট