‘প্রার্থীদের হলফনামা দেখে বিস্মিত, চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত হয়েছি’

‘প্রার্থীদের হলফনামা দেখে বিস্মিত, চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত হয়েছি’

মোস্তাফিজুর রহমান মূল্যস্ফীতি, পণ্য রপ্তানি, রাজনীতি, আসন্ন সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের হলফনামায় অর্থসম্পদ কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ার অবাক হয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেছেন, “প্রার্থীদের হলফনামা দেখে বিস্মিত, চমৎকৃত ও আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। এত কম সময়ে তারা এত টাকার মালিক কীভাবে হলেন, সেটি একটি প্রশ্ন। যদিও এক কোটি টাকার জমির দাম এক লাখ টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে হলফনামার থেকেও প্রকৃত সম্পত্তির পরিমাণ অনেক বেশি হবে। রাজনৈতিক দলের উচিত তাদের প্রার্থীদের সম্পদের বিশ্লেষণ করা। দুর্নীতি দমন কমিশনেরও বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার যে প্রার্থীদের এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ যৌক্তিক, অযৌক্তিক, নাকি অনৈতিক।”

অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) আয়োজনে দেশের সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মোস্তাফিজুর রহমান।

মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপত্বি করেন সংগঠনের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

মোস্তাফিজুর রহমান মূল্যস্ফীতি, পণ্য রপ্তানি, রাজনীতি, আসন্ন সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “প্রার্থীদের হলফনামায় অনেকের সম্পত্তি কয়েকশগুণ বেড়েছে। কীভাবে এত কম সময়ে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি বাড়ল তা দেখার বিষয়। যাদের সম্পত্তি এত বেড়েছে সরকার ও নিজ দলের উচিত এসব সম্পত্তির উৎস জানতে চাওয়া।”

“একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাজ হবে তাদের সম্পত্তির উৎস বের করা। তাদের সম্পত্তি অবৈধ দুর্নীতির মাধ্যমে হয়েছে কি না তা জানা এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। কারণ রাজনীতিবিদদের বিষয়ে যদি জনগণের সন্দেহ-অনাস্থা থাকে, তাহলে নির্বাচনের পর সাধারণ মানুষ তাদের কীভাবে গ্রহণ করবে।”

দেশের অর্থনীতির স্বার্থে তিনটি ক্ষেত্রে সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, কষ্টদায়ক হলেও সংস্কার করতে হবে। তাতে অর্থনীতিতে একধরনের ভারসাম্য আসবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন আয়কর আইন পাস করার পাশাপাশি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করেছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ পরামর্শ দিয়েছে, তাই আইন পাস বা সংশোধন করা হয়েছে, এভাবে না দেখে বরং ব্যাংক খাতে সুশাসন ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর দৃষ্টিকোণ থেকে একে দেখতে হবে।

“আইনগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু কিছু মানুষের ওপর চাপ বাড়বে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজনীতিবিদের সদিচ্ছা লাগবে।”

ডলারের দাম খোলাবাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে বলে মনে করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ডলারের দামের ক্ষেত্রে ‘শক থেরাপি’ দিতে হবে। হয়তো নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। ডলারের দামে বড় ধরনের সমন্বয় করলে পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়বে। তখন আমদানি শুল্ক কমানোর মতো আর্থিক উদ্যোগ নিতে হবে।”

যদিও ডলারের দাম বাড়লে পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দিতে হবে না। অন্যদিকে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসা বাড়বে। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হারও বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার বিষয়ে মত দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার গত নভেম্বরে নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করার পর বাণিজ্যে একধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় উদ্যোক্তারা চিন্তিত। নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, “বাণিজ্যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসবে কি আসবে না, এলে কোন পদ্ধতিতে আসবে, সেটি অনুমান করা কঠিন। আমরা দেখেছি, শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বলতে চাই, আমাদের যেসব জায়গায় উন্নতি করার প্রয়োজন আছে, সেগুলো যেন আমরা করি। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো আমরা করতে পারি।”

এ বিষয়ে মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, “শ্রমিকেরা এক দিনে সবকিছু চাইছেন না। তাদের পাশ কাটিয়ে কিংবা সঠিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সমস্যা বাড়ে। ফলে তাদের কথা শুনে সমস্যা সমাধানে একটি রূপকল্প (রোডম্যাপ) প্রণয়ন করা জরুরি। যুক্তরাষ্ট্র কী করবে না–করবে, তারা জানে। নিষেধাজ্ঞা দিতেও পারে। তবে আমরা যত শৈথিল্য দেখাব, ততই দেশটির আকাঙ্ক্ষা বাড়বে।”

ব্যাংক খাত নিয়ে তিনি বলেন, “এই খাতে অব্যবস্থাপনা অনিয়ম চলছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছে, কিছু ব্যাংক বিপর্যয়ের মধ্যেও পড়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত বা মার্জার করার বিষয় আগেই অনেকবার বলা হয়েছে। এজন্য আইনি দুর্বলতা ও নিয়মনীতিগুলো ঠিক করতে হবে। কারণ ব্যাংকিং সেক্টর হচ্ছে অর্থনীতির প্রাণ। এ খাতের সমস্যা পুরো অর্থনীতির ওপর পড়ে।”

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “ঋণ খেলাপির বিপরীতে একটি বড় অংকের অর্থ ব্যাংকের প্রভিশনিং করতে হচ্ছে। এর মানে টাকাটা অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারছে না, ব্যাংকে পড়ে থাকছে। এতে করে একদিকে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আয় কমে যাচ্ছে অর্থাৎ ১০০ টাকার আমানতের বিপরীতে সুদ দিচ্ছে কিন্তু ঋণ দিতে পারছে ৮০ টাকা। তার মানে ঋণের সুদহার বাড়াতে হচ্ছে। এটা আবার বিনিয়োগে প্রভাব ফেলছে।”

ব্যাংকিং সেক্টরের এ অবস্থা একটি ‘দুষ্টচক্র’সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এ খাতের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার সব কিছুই এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। এটা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এখানে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। আগামীতে এ খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে এ উদ্যোগ নিতে হবে।”

ভোটের আগে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি পরবর্তী

ভোটের আগে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

কমেন্ট