আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবে

আবার ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ যা করবে

বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভোটে জয়ী হয়ে ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেড় কোটি নতুন কর্মসস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ।এক্ষেত্রে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

আগামী দুই বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনাসহ স্বল্পশিক্ষিত তরুদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগীদের জন্য ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথাও ভেবেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

এসবের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়াতে অনলাইন শ্রমবাজারের পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে।

বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, তার দল আবারও ক্ষমতায় গেলে যুব বেকারত্বের হার ১০.৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩.০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

এছাড়া আরও যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—

>> ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

>> দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে, চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং ২০৪১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

>> ২০৩০ সাল নাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেকার যুবকদের সর্বশেষ হার ১০ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

>> শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের বাইরে থাকা ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ যুবদের অনুপাত আগামী ৫ বছরে ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। আগামী ৫ বছরে ২ লাখ জন যুবকদের মাঝে ৭৫০ কোটি টাকা যুব ঋণ বিতরণ করা এবং ২ লাখ ৫০ হাজার জন যুবককে আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

>> দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখা হবে। শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে।

>> বাজারমূল্য ও আয়ের মধ্যে সঙ্গতি প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হবে, যা বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে অনিশ্চয়তা লাঘব করবে।

>> ব্যবহারযোগ্য কৃষি যন্ত্রপাতি সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি প্রদান অব্যাহত থাকবে। কৃষির আধুনিকায়ন, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং কৃষি গবেষণার সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ অব্যাহত থাকবে।

>> ২০২৮ সালের মধ্যে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা দেড় গুণ বাড়ানো হবে।

>> দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গ্যাস ও এলপিজির সরবরাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হবে।

>> বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। পর্যায়ক্রমে ভাড়াভিত্তিক ও অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করা হবে।

>> বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করা হবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ ও পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

>> পরিবেশবান্ধব জ্বালানি থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।

>> সমগ্র অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মূলোৎপাটনের লক্ষ্যে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়া টাস্কফোর্স গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা হবে।

>> জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বিভাজন অধিকতর স্পষ্ট করা হবে।

>> বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে ‘অপপ্রচার’, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

>> দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং সব ধরনের হয়রানির অবসান ঘটানোর কাজ চলমান থাকবে।

>> শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াবে এবং তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের অনুপাত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে। দরিদ্র ও দুর্বলতর জনগোষ্ঠীর সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ আরও প্রসারিত করা হবে।

>> ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দেশের প্রত্যেক মানুষের কাছে একটি ইউনিক হেলথ আইডি প্রদান এবং হাসপাতালে অটোমেশন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে।

>> সকলের জন্য সমান সুযোগ রেখে সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্বাস্থ্য ইনস্যুরেন্স চালু, হেলদি এজিং স্কিমের আওতায় প্রবীণদের অসংক্রামক রোগব্যাধি নিরাময় এবং পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করা হবে।

>> প্রবীণ নাগরিকদের কল্যাণে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে জেরিয়াট্রিক সেবা প্রচলনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

>> অটিস্টিক শিশুদের জন্য গৃহীত বিশ্বে সমাদৃত কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো হবে।

>> অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রয়োগে বাধা দূর করা হবে।

>> সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন এবং সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে।

>> দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণ করা হবে।

>> ডোপ টেস্ট নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।

>> ২০৪১ সাল নাগাদ ১২টি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।

>> অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য নগদ সাহায্য ও বাসস্থান প্রদান কর্মসূচি সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।

>> মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অসঙ্গতি দূর এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

এবং

কিশোরী ক্ষমতায়নে স্কুলগামী ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান অব্যাহত থাকবে।

ইশতেহার ঘোষণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এই মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এই উত্তরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জেরও। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সক্ষমতা থাকতে হবে।”

আওয়ামী লীগের ইশতেহার: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ ১১ বিষয়ে অগ্রাধিকার পরবর্তী

আওয়ামী লীগের ইশতেহার: দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ ১১ বিষয়ে অগ্রাধিকার

কমেন্ট