চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে এই হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

সরকারি এই সংস্থাটি বলেছে, চূড়ান্ত হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সাময়িক হিসাবে এই হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।

অর্থবছর শেষ হওয়ার সাড়ে সাত মাস পর বৃহস্পতিবার জিডিপির চূড়ান্ত হিসাবের এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।

২০২২-২৩ অর্থবছর শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ১ জুলাই। শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছর; শেষ হবে আগামী ৩০ জুন।

গত বছরের ১৬ মে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর) অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে বলা হয়েছিল ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

নয় মাস পর বৃহস্পতিবার রাতে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

সংকটের মধ্যেও এই প্রবৃদ্ধিকে ‘খুবই ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমেছে। তার পরও এই প্রবৃদ্ধিকে আমি খুবই ভালো অর্জন বলে মনে করি। চলতি অর্থবছরেও যদি এই প্রবৃদ্ধি হয়, সেটাকেও আমি ভালো অর্জন বলবো।”

তিনি বলেন, “আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি— সংকটের এই সময়ে আমরা যদি ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি তাও যথেষ্ট। প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে এখন মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে হবে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক করতে হবে।”

চূড়ান্ত হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) হয়েছিল ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

একই দিন চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এই তিন মাসে স্থিরমূল্যে এই জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

বিবিএসের হিসাবে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তার আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

এই হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ এই তিন মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ বেড়েছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে স্থিরমূল্যে বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ১০ লাখ ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। অর্থনীতির চলমান এ অবস্থায় তা অর্জিত হওয়া নিয়ে অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘোষণার পর থেকেই সংশয় প্রকাশ করে আসছেন।

অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় অর্থ মন্ত্রণালয় জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমানো হবে বলে জানিয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।

গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রান্তিকভিত্তিক (তিন মাস পরপর) জিডিপি হিসাব প্রকাশ করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করা হয়। এরপর ২১ নভেম্বর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস।

প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রকাশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দিয়েই শুরু করল পরিসংখ্যান ব্যুরো।

এর ফলে এখন প্রতি অর্থবছরে চারবার জিডিপির হিসাব পাওয়া যাবে। প্রতিবার আগের তিন মাসের জিডিপির গতিপ্রকৃতির চিত্র মিলবে। পরে বছর শেষে তা গড় করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব করার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন দেশের গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা। দুই বছর আগে এ নিয়ে উদ্যোগও গ্রহণ করে বিবিএস। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিচ্ছে বাংলাদেশ। এই ঋণের দুই কিস্তি ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার। ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বলেছে, তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে।

সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে।

এতদিন পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.০৭% পরবর্তী

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.০৭%

কমেন্ট