বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিলো ভারত
দেশটির বাজারে দাম কমতে থাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের একটি কমিটির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। তাদের আশা, এতে আন্তর্জাতিক বাজারের দর পাবেন তারা।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মাস খানেক আগেই বাংলাদেশসহ কয়েক দেশে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
দেশটির বাজারে দাম কমতে থাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের একটি কমিটির এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। তাদের আশা, এতে আন্তর্জাতিক বাজারের দর পাবেন তারা।
গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এর নেতৃত্বে মন্ত্রীদের ওই কমিটির বৈঠকে নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয় বলে ভারতের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। মাঝে কিছুটা কমে কেজি ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছিল। কয়েক দিন আগে ফের ১০০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিদিনের খুচরা বাজার দর অনুযায়ী, সোমবার রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, হাতিরপুল ও শেওড়াপাড়া—এই চার বাজারে সোমবার ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
খরার কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারক দেশ ভারত গত অক্টোবরে প্রথমে টনপ্রতি উচ্চ হারের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দেয় এবং পরে ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
ওই সময়কার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের বাজারে দাম বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ভারতের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশে রান্নায় ব্যবহার করা এ পণ্যের সংকট দেখা দেয়। চাহিদা মেটাতে বছরজুড়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশটি থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে।
রবি ও সোমবার পেঁয়াজ রপ্তানি শুরুর অনুমোদন নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টন রপ্তানির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে কমিটির বৈঠকে। পাশাপাশি বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন রপ্তানির আলাদা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে রপ্তানির খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তারিত সার্কুলার প্রকাশ করবে দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো।
বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, মরিশাস ও বাহরাইনে প্রাথমিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি করার দ্বার খুলল।
হিন্দুস্তান টাইমস ও ইকোনমিক টাইমসসহ ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, পেঁয়াজ রপ্তানির জন্য অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু রোজার আগেই ভারত থেকে পেঁয়াজ ও চিনি আসবে বলে দেশে একাধিক অনুষ্ঠানে বলেছেন। এ দুই পণ্য পেতে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ চলার কথা বলেন তিনি।
অপরদিকে চলতি মাসের শুরুতে দিল্লি সফরকালে রোজার আগে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ ও চিনি পেতে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “রমজানের আগে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি যাতে আমরা পাই, সে সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।”
ভারতে পেঁয়াজ বেশি উৎপাদন হয় গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে। মৌসুমের এ সময়ে এ দুই অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পেছনে এটি মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। রোববারের বাজারদর অনুযায়ী প্রতি কুইন্টালে কমেছে ১০০ রুপি।
দেশটির সরকারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মহারাষ্ট্রের কৃষকরা।
মহারাষ্ট্র রাজ্য পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ভারত দিঘলে বলেন, “রপ্তানি শুরু হলে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভালো দর পাওয়ার আশা করছি।”
মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, “নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। পেঁয়াজ চাষিদের অনেক প্রশ্ন নিয়ে আমরা নিয়মিত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও পীযূষ গয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।”
স্থানীয় বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথমে প্রতি টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৮০০ ডলারে বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সেই মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩১ মার্চ করা হয়। এরপর দেশটিতে যোগান কমে গেলে গত ৭ ডিসেম্বর রপ্তানিতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
কমেন্ট