বিদ্যুতের দাম বাড়ছে ৭০ পয়সা, বাড়ল বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম
বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়বে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানিয়েছেন।
বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। মার্চ থেকে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের দাম।
বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট সর্বনিম্ন ৩৪ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়বে বলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “বিদ্যুতের নতুন দাম মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে। গ্যাসের দামও বাড়ছে। তবে বাসাবাড়ির গ্রাহক ও শিল্প পর্যায়ে গ্যাসের দাম এখন বাড়বে না। শুধুমাত্র যে গ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সেই গ্যাসের দাম বাড়ছে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে।”
নসরুল হামিদ বিপু একে মূল্যবৃদ্ধি বলতে নারাজ। তিনি বলেন, “খরচের চেয়ে বেশি দাম নিলে মূল্যবৃদ্ধি বলা যেত। এখন ঘাটতি অনেক, তাই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে তা খুবই কম পরিমাণে।”
সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি খুচরায় ৫ শতাংশ বাড়িয়ে বিদ্যুতের নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়, যা মার্চ থেকে কার্যকর করা হয়।
ওই দর অনুযায়ী খুচরায় গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ভারিত গড় হয় ৮ টাকা ২৪ পয়সা, যা ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে ৭ টাকা ৮৫ পয়সা ছিল; আর জানুয়ারিতে ছিল ৭ টাকা ৪৮ পয়সা। ওই সময় তিন মাসের মধ্যে তিন দফায় দাম বাড়ানো হয়েছিল।
গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যে কোনো দেশে জ্বালানির উপরেই বিদ্যুতের দাম ওঠানামা করে। কাজেই ওটার সঙ্গে আমাদের সমন্বয় করতে হবে, এছাড়া উপায় নেই। বিদ্যুতের দাম নিচের লেভেলে ইউনিট প্রতি ৩৪ পয়সা থেকে ৭০ পয়সা বাড়ছে।”
বিদ্যিৎ ও জ্বালানি খাতে যে বড় অংকের ভর্তুকি দিতে হয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, “ডলারের দামের পার্থক্যের কারণে ভর্তুকি আরও বেশি বেড়েছে। আস্তে আস্তে ভর্তুকি সমন্বয়ে যেতে হবে। আগামী তিন বছর আমরা এটাকে সমন্বয় করব, যাতে সহনীয় পর্যায়ে থেকে সমন্বয়টা হয় সেটার একটা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।
"বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভর্তুকি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য মূল্য সমন্বয়ে যাচ্ছি। তেলের ক্ষেত্রে আমরা ডায়নামিক প্রাইসিংয়ে যাচ্ছি।”
গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “গ্যাসের দাম মূল্য সমন্বয় গ্রাহক পর্যায়ে হচ্ছে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রাহকদের জন্য সেটা হচ্ছে। গ্যাসের আবাসিক পর্যায়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দাম বাড়ছে না। শিল্পেও গ্যাসের দাম বাড়ছে না।”
বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ল
বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ইউনিট প্রতি ৭৫ পয়সা বাড়িয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে মূল্যবৃদ্ধির এই ঘোষণা আসে, যা চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বিল থেকেই কার্যকর হবে।
সরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আগে গ্যাসের ইউনিট মূল্য ছিল ১৪ টাকা। দাম বাড়ায় তার সঙ্গে যোগ হবে ৭৫ পয়সা।
আগে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্ট, স্মল পাওয়ার প্লান্ট ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দাম ছিল ইউনিট প্রতি ৩০ টাকা; এখন সেখানেও যোগ হবে ৭৫ পয়সা অর্থাৎ ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।
তবে সার কারখানার জন্য আগের মতই প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা, শিল্প সংযোগের জন্য প্রতি ইউনিট ৩০ টাকা, চা বাগানের জন্য ১১ টাকা ৯৩ পয়সা, হোটেল রেস্তোরাঁর জন্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা, সিএনজি ফিলিং স্টেশনের জন্য ৩৫ টাকা এবং গৃহস্থালির জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা অপরিবর্তিত থাকছে।
ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা বেশ কয়েকদিন ধরে বলে আসছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে তা কার্যকর হওয়া শুরু হল।
কমেন্ট