সর্বজনীন পেনশন স্কিমে গ্রাহক লাখ ছাড়াল
কিস্তি বা চাঁদা হিসেবে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৪২ কোটি সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের গ্রাহক সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। সাড়ে আট মাস আগে বহুল আলোচিত ও প্রতিক্ষিত এই কর্মসূচি চালুর প্রথম কয়েক দিন বেশ ভালো সাড়া পাওয়া গেলেও পরে তাতে ভাটা পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য এই স্কিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ আবার বেড়েছে।
সুখে ভরবে আগামী দিন, পেনশন এখন সর্বজনীন’ এ স্লোগানকে ধারণ করে প্রৌঢ় জীবনকে সুখে ভরাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দিন থেকেই তা সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। প্রথম দিন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ৮ হাজার মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা দিয়েছিলেন ১ হাজার ৭০০ জন।
চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিম রয়েছে। এগুলোর নাম হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাস। বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’।
দেশের ১০ কোটি মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর সাড়ে আট মাস হতে চলেছে। পূর্ণ হয়েছে। চার স্কিমে প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন অন্তর্ভুক্ত হলেও দ্বিতীয় মাসে এ কর্মসূচিতে যোগ দেন মাত্র ১ হাজার ৬৬৯ জন। তৃতীয় মাসে তা আরও ভাটা পড়ে; ১ হাজার ১৩৪ জন অন্তর্ভুক্ত হন।
এর পর প্রতি মাসেই কমছে। সব মিলিয়ে সাত মাসে এই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হন ২৭ হাজারের কিছু বেশি মানুষ। এই সংখ্যা বাড়াতে পক্ষ থেকে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আর তাতে পরের দেড় মাসেই ৭৩ হাজারের বেশি মানুষ পেনশন স্ক্রিমে যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।
সোমবার পেনশন কর্তৃপক্ষের নিউজ বুলেটিন ‘সর্বজনীন পেনশন বার্তা’র প্রথম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আজ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিবন্ধন সংখ্যা এক লাখের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নিবন্ধনের এ সাফল্যের পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে সরকারের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। যারা এই স্কিমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন।”
এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগকে সফলভাবে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে জানান কবিরুল ইজদানী খান।
পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সোমবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট মাসে চার ধরনের পেনশন কর্মসূচিতে গ্রাহক হয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ২২৬ জন। সব মিলিয়ে কিস্তি বা চাঁদা হিসেবে গ্রাহকের কাছ থেকে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৪২ কোটি সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এদিকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থায় আগামী জুলাই থেকে যোগ দেওয়া চাকুরেদের সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হওয়া বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। তারা বিদ্যমান পেনশনের বদলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
তখন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন মনে করছেন পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
‘পেনশন বার্তা’র র ১ম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন
এদিকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নিউজ বুলেটিন ‘সর্বজনীন পেনশন বার্তা’র ১ম সংখ্যার মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সর্বজনীন পেনশন কার্যক্রম নিয়ে বুলেটিনের ১ম সংখ্যা প্রকাশ করা হয়।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। এ সময় অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান, অর্থ বিভাগের বিভিন্ন উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিভিন্ন কার্যক্রম ও হালনাগাদ অবস্থা অর্থ প্রতিমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
এই বুলেটিনের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণ আরও বিস্তারিত জানতে পারবে এবং উপকৃত হবে বলে জানান অর্থ প্রতিমন্ত্রী।
কমেন্ট