সাময়িক হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৮২%, মাথাপিছু আয় ২৭৮৪ ডলার
অর্থবছরের সাত মাস (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সোমবার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।
সাময়িক হিসাবে আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়ে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার।
অর্থবছরের সাত মাস (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সোমবার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেশে ৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। চূড়ান্ত হিসাবে অবশ্য তা কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে।
চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ডলারের হিসাবে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ৫০ লাখ ৪৮ লাখ ২৭ কোটি টাকা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে ডলারের হিসাবে জিডিপির আকার ছিল ৪৫২ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ছিল ৪৪ লাখ ৯০ লাখ ৮৪২ কোটি টাকা।
সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ৩ লাখ ৬ লাখ ১৪৪ টাকা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৭৩ লাখ ৩৬০ টাকা।
প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের এই হিসাব কষেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেশ খানিকটা বাড়লেও কৃষি ও শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরের এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনের খাত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বরাবরই দেখিয়ে আসছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
পরের বছর কোভিড মহামারির ধাক্কায় তা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল। পরের বছর ৭ শতাংশ ছাড়ালেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে।
এর আগে চলতি অর্থবছরের দু্ই প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে দেখা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় অর্ধেক।
প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও তা যে অর্জিত হবে না, তা অর্থনীতিবিদরা তখনই বলছিলেন।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে প্রান্তিকভিত্তিক (তিন মাস পরপর) জিডিপি হিসাব প্রকাশ করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এরপর ২১ নভেম্বর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস।
প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব প্রকাশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দিয়েই শুরু করে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
দীর্ঘদিন ধরে প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব করার তাগিদ দিয়ে আসছিলেন দেশের গবেষক ও অর্থনীতিবিদেরা। দুই বছর আগে এ নিয়ে উদ্যোগও গ্রহণ করে বিবিএস। এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদনও নেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের দুই কিস্তি ১১৬ কোটি (১.১৬ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার। চলতি মাসেই তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে।
এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রস্তুত করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে।
সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে।
এতদিন পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।
অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সংকটের মধ্যে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকে আমি খুবই ভালো বলে মনে করি। তবে চূড়ান্ত হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, দিন যতো যাচ্ছে, আমাদের অর্থনীতির সূচকগুলো খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
“তবে আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, কঠিন এই সংকটের সময়ে আমরা যদি ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি তাও যথেষ্ট। প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে এখন আমাদের মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে হবে। ডলারের বাজার স্বাভাবিক করতে হবে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
কমেন্ট