৮০% বিত্তবান কর ফাঁকি দেয়: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ
শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগামী বাজেটের কৌশল’ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।
দেশের ৮০ শতাংশ বিত্তবান কর ফাঁকি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, “কর ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা, বৈষম্য, দুনীর্তি ও অন্যায্যতা বহাল রেখে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে করারোপ করা হলে সেটি রাজস্ব আহরণে ভালো ফল দেবে না। রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালীদের চাপের কারণে রাজস্ব আহরণ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৮০ শতাংশ বিত্তবান কর ফাঁকি দিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ ভ্যাট দেয় না। এত কম রাজস্ব আয় দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন চালানোই যাচ্ছে না, সেখানে উন্নয়ন ব্যয় মেটাবে কিভাবে।”
শনিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) ‘অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আগামী বাজেটের কৌশল’ বিষয়ক এক ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী।
দেশে চলছে ডলার–সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। সরকার বিদ্যুৎ ও সারে ভর্তুকির টাকা দিতে না পেরে ৮ থেকে ১০ বছর মেয়াদি বন্ড ছেড়েছে, যাতে আপাতত নগদ টাকা দিতে না হয়। ডলার-সংকটে বিদেশ থেকে আনা গ্যাস-বিদ্যুতের দামও বকেয়া থাকছে।
আর এ অবস্থার মধ্যেই জনপ্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ২৬১টি নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “ডিসি—ইউএনওদের দামি গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। বর্তমানে আশংকাজনকভাবে ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। দেশে রিজার্ভের পরিমাণ যেভাবে কমে যাচ্ছে তা শঙ্কার কারণ হতে পারে।”
তিনি বলেন, “আর্থিক খাতে সুশাসনে আমরা অনেকটা এগিয়ে ছিলাম, কিন্তু বর্তমানে কিভাবে পিছিয়ে গেলাম সেটাই বিশ্ময়কর। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে আইএমএফ খুব বেশি জানে এটি বিশ্বাস করার কারণ নেই। আইএমএফ এর পরামর্শ দেশ ও জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে গ্রহণ করতে হবে।”
“বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি দুবাই—সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছে। তারা কোন দেশের নাগরিক সেটাও স্পষ্ট নয়। তারা কিভাবে টাকা আনা-নেয়া করছেন বাংলাদেশ ব্যাংক সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী বলেন, মূল্যস্ফীতি, ডলার–সংকট, অনিয়ন্ত্রিত দ্রব্যমূল্য বৈদেশিক ঋণের চাপ, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঘোষিত হচ্ছে আসন্ন বাজেট। তবে দেশে বাজেট বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুর্নীতি।
হাসান আহমেদ চৌধুরী আরও বলেন, আর্থিক খাতে বর্তমানে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। ঋণ জালিয়াতকারী, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থ পাচারের মতো ক্যানসারের চিকিৎসায় উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এখন জরুরি।
“বাংলাদেশ ব্যাংক আরোপিত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করলে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। তাহলে ধীরে ধীরে মানুষ ব্যাংকিং খাতের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আর ব্যাংকে নিরাপদে আমানত রাখার নিশ্চয়তা না থাকলে অর্থ পাচার বাড়বে।”
অর্থনৈতিক সুরক্ষায় আসন্ন বাজেটের কৌশল নিধার্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান নিম্নের দশ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
>> খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কৃষিবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
>> পোশাকসহ অন্যান্য রপ্তানীখাতে অপ্রয়োজনীয় প্রণোদনা কমিয়ে আনতে হবে।
>> নতুন কোন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
>> পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর ট্যাক্স আরোপ করতে হবে।
>> যারা কর প্রদান করছে তাদের ওপর অযৌক্তিকভাবে করের বোঝা না বাড়িয়ে করের আওতায় বাড়াতে হবে।
>> প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের উপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে হবে।
>> শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
>> বাজেটকে সামনে রেখে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে গণমাধ্যম কমীর্দের প্রবেশ নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তা নিরসন করতে হবে।
>> এনবিআরকে কর আহরণে কঠোর অবস্থান নিতে রাজনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
এবং
>> বাংলাদেশ রেলওয়ে, বিআরটিসি ও বিমানসহ লোকসানী খাতে বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ছায়া সংসদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েল বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজে বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
কমেন্ট