বিদেশি ঋণের এক–চতুর্থাংশের বেশি দিয়েছে জাপান

বিদেশি ঋণের এক–চতুর্থাংশের বেশি দিয়েছে জাপান

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১ দশমিক শূন্য পাঁচ ৫ বিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার (৬.২৮ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার (১.৬৬ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। যা মোট ঋণ-সহায়তার ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বা এক–চতুর্থাংশের বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৯ কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার (১.৫০ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। যা মোট ঋণ-সহায়তার ২৩ দশমিক ৮৫ শতাংশই।

বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১০৫ কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার (১.০৫ বিলিয়ন) ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) রবিবার বিদেশি ঋণের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে রাশিয়া দিয়েছে ৮৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। চীন দিয়েছে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ভারত দিয়েছে ২৪ কোটি ২২ লাখ ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

এছাড়া অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৫৩ কোটি ৫ লাখ ডলার।

ইআরডি’র প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে ৬ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের যে ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে, তার মধ্যে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।

হিসাব বলছে, মোট ঋণ-সহায়তার ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। আর সুদ ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই দশ মাসে মোট ৫৯১ কোটি ৬৩ লাখ (৫.৯১ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের শুরু থেকে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে তা কমে যায়; ঋণাত্মক (-) প্রবৃদ্ধিতে চলে আসে।

তবে ডিসেম্বরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ ছাড় করে দাতারা। পরের কয়েক মাসেও কম-বেশি ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এতে দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) হিসাবে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।

প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩৬.৫৫ শতাংশ

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ (৭.৬০বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল ৫ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই দশ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দাতাদের ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট ৬ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে, তারমধ্যে ৫ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার প্রকল্প ঋণ। আর ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার হচ্ছে অনুদান। অনুদানের মধ্যে ৩১ কোটি ৬৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার প্রকল্প সহায়তা। আর ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা।

সংকট সামাল দিতে আরও ঋণ প্রয়োজন

দুই বছরের করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই সোয়া দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। এই চাপ সামাল দিতে আরও বেশি বিদেশি ঋণ-সহায়তার প্রয়োজন বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

এআরএইচ ডট নিউজকে তিনি বলেন, “সত্যিই একটা কঠিন সময় পার করছি আমরা। রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি ৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের আরও বেশি কম সুদের বিদেশি ঋণ দরকার।”

“নতুন বাজেট আসছে। এই বাজেটে সংকট কাটাতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে। রিজার্ভ বাড়াতে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে আরও ঋণ-সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জোর দিতে হবে। যেসব ঋণ পাইপলাইনে আটকে আছে, সেগুলো দ্রুত ছাড় করাতে দাতাদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে হবে,” বলেন দীর্ঘদিন আইএমএফের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসা অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু সেই জোয়ার আর থাকেনি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সেই নেতিবাচক ধারা নিয়েই ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।

এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা, দশ মাসে খরচ ৪৯% পূর্ববর্তী

এডিপি বাস্তবায়নে বেহাল দশা, দশ মাসে খরচ ৪৯%

৮০% বিত্তবান কর ফাঁকি দেয়: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ পরবর্তী

৮০% বিত্তবান কর ফাঁকি দেয়: ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর