দেশে ব্যবসার পরিবেশ আগের চেয়ে খারাপ: জরিপ

দেশে ব্যবসার পরিবেশ আগের চেয়ে খারাপ: জরিপ

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) এমন চিত্র উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীদের নিয়ে করা জরিপের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে বলে এক জরিপে উঠে এসেছে। ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তিসহ ১১টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই জরিপ করা হয়। ।

দেশের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিবেশ সূচকে স্কোর দাঁড়িয়েছে ১০০ এর মধ্যে ৫৮ দশমিক ৭৫। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে যা ৬১ দশমিক ৯৫ ছিল।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) এমন চিত্র উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীদের নিয়ে করা জরিপের ভিত্তিতে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে।

এবার নিয়ে তৃতীয়বার বিবিএক্স জরিপ করেছে এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার এমসিসিআইয়ের গুলশান কার্যালয়ে জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

কৃষি ও বনায়ন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও ট্যানারি, ওষুধ ও রাসায়নিক, আবাসন, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পরিবহন, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা—মোট এই ১২টি খাতের ওপর জরিপটি করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এই জরিপ করা হয়েছে। কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার, সে বিষয়ে ধারণা দিতে এই জরিপ। নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন, তাদের কোন পথে চলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, স্কয়ার ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ।

ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামোসুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান—এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকটি এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এবারে জরিপে দেখা গেছে, উল্লিখিত ১১টি সূচকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ করেছে ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে; এই সূচকে প্রাপ্ত পয়েন্ট মাত্র ২৮ দশমিক ১১। গত বছরের জরিপে বলা হয়েছিল, ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ পাওয়ার বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে, এবারের জরিপেও তার ধারাবাহিকতা দেখা গেল।

২০২১-২২ অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার পরিবেশ সূচকের ১০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬১ দশমিক শূন্য ১। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই স্কোর সামান্য বেড়ে হয় ৬১ দশমিক ৯৫। ওই বছরে সূচকের মানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ার বড় কারণ ছিল ১০টি সূচকের মধ্যে ৪টির অবস্থা খারাপ হয়; বাকি ৬টি সূচক উন্নতির দিকে ছিল।

২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ভালো করেছে অবকাঠামো খাত। এই সূচকে ১০০-এর মধ্যে স্কোর ৭১ দশমিক শূন্য ৮।

এ ছাড়া ব্যবসা শুরুর সূচকে ৬২ দশমিক ৭৪; জমির প্রাপ্যতা সূচকে ৫৩ দশমিক ১১; আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি সূচকে ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; শ্রম নিয়ন্ত্রণে ৭০ দশমিক শূন্য ৪; বিরোধ নিষ্পত্তিতে ৬২ দশমিক ৩৮; বাণিজ্য সহজীকরণে ৬০ দশমিক ৮৭; কর পরিশোধে ৫৪ দশমিক ৭৪; প্রযুক্তি গ্রহণে ৬৩ দশমিক ৫০ এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মানে স্কোর ৫১ দশমিক ৫৯।

‘মূল্যস্ফীতি কমে আসবে’

অনুষ্ঠানে আগামী জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে বলে আশা কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

সালমান এফ রহমান বলেন, এত বড় অর্থনীতির তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী থাকা দরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, এক্সচেঞ্জ কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রীও চান আমাদের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করতে।

“পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করতে যা প্রয়োজন তা করতে হবে। পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

মূল্যস্ফীতি এখনও দেশের একটি সমস্যা উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, “ডলারের দাম বাড়ার কারণেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায়। একই সঙ্গে রিজার্ভে চাপ সৃষ্টি হয়। তবে এখন ডলারের সংকট কাটছে। তাই ধীরে ধীরে এসব সমস্যা কেটে যাবে।”

“আশা করি, আগামী জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতিও কমে আসবে।”

রাজস্ব আদায় বাড়াতে কর হার কমানো উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ এনবিআর। বারবার বলা হচ্ছে, করজালের আওতা বাড়িয়ে করহার কমিয়ে দিলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। কিন্তু তারা প্রতিবার যারা কর দিচ্ছে, তাদের আরও বেশি চাপে ফেলা হচ্ছে। আসলে সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে।

সালমান এফ রহমান বলেন, “এই বাজেটে নতুন ধরনের সংস্কার আসবে। আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও গত বছরের তুলনায় কমেছে। এটা আমাদের জন্য একটি সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। দেশে ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ আছে। এখন আমাদের কাজ করতে হবে।”

“আমি আশাবাদী, সামনে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।”

রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক পরবর্তী

রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

কমেন্ট