লক্ষ্য পূরণে ২ মাসে সোয়া লাখ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে

লক্ষ্য পূরণে ২ মাসে সোয়া লাখ কোটি টাকা আদায় করতে হবে এনবিআরকে

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দুই লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

তবে এই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলেও অর্থবছরের শেষ দুই মাসে অর্থাৎ মে-জুন মাসে এক লাখ ২০ হাজার ৬২২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে সরকারের রাজস্ব আদায়কারী প্রধান সংস্থা এনবিআরকে।

যা কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

বৃহস্পতিবার এনবিআর রাজস্ব আদায়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩৯ হাজার ৮২ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আহরণ হয়েছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা।

এই দশ মাসে আদায় হওয়া রাজস্বের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের জন্য নির্ধারণ করা সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ৭০ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবশেষ এপ্রিল মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের এপ্রিলের চেয়ে ১৮ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত বছর এপ্রিলে রাজস্বের পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা।

সংকটের মধ্যে রাজস্ব আদায়ের এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে (মে-জুন) এনবিআরকে এক লাখ ২০ হাজার ৬২২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে আদায় করতে হবে ৬০ হাজার ৩১১ কোটি টাকা, যা বর্তমান আদায়ের পরিমাণের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।

‘এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’ উল্লেখ করে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রতি বছরই এনবিআর উচ্ছাভিলাষী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরে। মাঝে এসে কমায়। তারপরও বছর শেষে সেই সংশোধিত লক্ষ্য পূরণ হয় না।”

“আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের অন্যতম প্রধান শর্ত ছিল রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম—এবার বোধ হয় এনবিআর রাজস্ব বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাবে; নানা পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সেই একই অবস্থা; কোনো উন্নতি নেই।”

“এটা ঠিক যে, অর্থবছরের শেষ দিকে রাজস্ব আদায় বাড়ে। তবে কোনোভাবেই তা এক মাসে ৬০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা সম্ভব নয়। তাই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা আদায় করা কোনোভাবে সম্ভব নয়,” বলেন মোহাাম্মদ মজিদ।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক ও ভ্যাট (মূসক) মিলিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ভ্যাট, সম্পূরক ও আবগারি শুল্ক এবং টার্নওবার কর থেকে মোট আদায় হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা, যা আগের বারের একই সময়ে ছিল ৯৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমকি ১ শতাংশ।

অপরদিকে প্রত্যক্ষ কর আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৯৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা আহরণ হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৭৮ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

এদিকে একক মাসের হিসাবে এপ্রিলে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিন খাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে আমদানি শুল্কে, ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আয়করে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং মূসকে ১৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।

দেশে ব্যবসার পরিবেশ আগের চেয়ে খারাপ: জরিপ পরবর্তী

দেশে ব্যবসার পরিবেশ আগের চেয়ে খারাপ: জরিপ

কমেন্ট