বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪২ শতাংশ

বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪২ শতাংশ

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি যে ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে, তার মধ্যে ৩০৬ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার (৩.০৭ বিলিয়ন) ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।

বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ বেড়েই চলেছে। ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ বাবদ ১২৫ কোটি ৩৬ লাখ (১.২৫ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করেছে সরকার।

এই অঙ্ক ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এই ১১ মাসে ৮৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার শোধ করা হয়েছিল।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বুধবার মোট ঋণ, প্রতিশ্রুতি ও সুদ-আসল পরিশোধসহ বিদেশি ঋণের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৭০২ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার (৭.০২ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭৬ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার (১.৭৬ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। যা মোট ঋণ-সহায়তার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ বা এক–চতুর্থাংশের বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৫৯ কোটি ৯২ লাখ ৭০ হাজার (১.৬ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। যা মোট ঋণ-সহায়তার ২২ দশমিক ৮ শতাংশ।

এছাড়া বিশ্বব্যাংক দিয়েছে ১৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৮০ হাজার (১.৪১ বিলিয়ন) ডলার।

অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে রাশিয়া দিয়েছে ৮৮ কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ডলার। চীন দিয়েছে ৩৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ভারত দিয়েছে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ১০ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

এছাড়া অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৬১ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

ইআরডি’র প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অনুকুলে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি যে ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে, তার মধ্যে ৩০৬ কোটি ৮১ লাখ ৩০ হাজার (৩.০৭ বিলিয়ন) ডলার চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে।

হিসাব বলছে, মোট ঋণ-সহায়তার ৪৪ শতাংশ চলে গেছে আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার। আর সুদ ১ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই দশ মাসে মোট ৬৯৮ কোটি ১০ লাখ (৬.৯৮ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৮৮ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ১ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের শুরু থেকে সরকারের বিদেশি ঋণ গ্রহণ বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এসে তা কমে যায়; ঋণাত্মক (-) প্রবৃদ্ধিতে চলে আসে।

তবে ডিসেম্বরে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ ছাড় করে দাতারা। পরের কয়েক মাসেও কম-বেশি ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এতে ১১ মাসের (জুলাই-মে) হিসাবে প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বেশ কিছু বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হওয়ায় সার্বিকভাবে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। যেমন মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় আছে।

প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ

ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ (৭.৯৩ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই প্রতিশ্রুতির অঙ্ক ছিল ৫ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই ১১ মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে দাতাদের ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে ৩৩ শতাংশ।

বিদায়ী অর্থবছরের জুলাই-মেসময়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের যে বিদেশি ঋণ-সহায়তা এসেছে, তারমধ্যে ৬ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার প্রকল্প ঋণ। আর ৪০ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ডলার হচ্ছে অনুদান। অনুদানের মধ্যে ৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলার প্রকল্প সহায়তা। আর ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার খাদ্য সহায়তা।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন (১ হাজার কোটি) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি।

দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।

কিন্তু সেই জোয়ার আর থাকেনি। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশি ঋণ ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। সেই নেতিবাচক ধারা নিয়েই ২০২৩-২৪ অর্থবছর শুরু হয়।

২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ।

তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার।

বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থ ছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন, ছাড় দু-এক দিনের মধ্যেই পরবর্তী

আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন, ছাড় দু-এক দিনের মধ্যেই

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর