‘প্রতয়’ স্কিম নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই আসছে ‘সেবক’
কেমন হবে ‘সেবক’ পেনশন স্কিম-তা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই। তবে এখন যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তারা বিদ্যমান নিয়মেই পেনশন পাবেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর সরকারি চাকরিতে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিম বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই স্কিম বাতিলের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে।
আন্দোলনের তৃতীয় দিনে এসে আলোচনার জন্য সরকারের ডাক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে এই আলোচনা হবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া এই খবর নিশ্চিত করেছেন।
এর মধ্যেই আসছে আরও একটি সর্বজনীন পেনশন স্কিম বা কর্মসূচি। সরকারি কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমের নাম রাখা হয়েছে ‘সেবক’। আগের ঘোষণা অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত বা সমজাতীয় সংস্থাগুলোর জন্য ‘প্রত্যয়’ চালু হয়েছে গত ১ জুলাই থেকে। ‘সেবক’ চালুর কাজ শুরু হয়নি এখনও। এটি চালু হবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে।
কেমন হবে ‘সেবক’ পেনশন স্কিম-তা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে কৌতুহলের শেষ নেই। তবে এখন যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তারা বিদ্যমান নিয়মেই পেনশন পাবেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর সরকারি চাকরিতে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৬ জুন বাজেট বক্তব্যে ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন সরকারি চাকরিজীবীরাও বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তবে এখন যারা সরকারি চাকরিতে আছেন, তারা বিদ্যমান নিয়মেই পেনশন পাবেন। ২০২৫ সালের ১ জুলাইয়ের পর সরকারি চাকরিতে যারা নতুন নিয়োগ পাবেন, তারা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতাভুক্ত হবেন।
অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “পেনশন সুবিধা পান, এমন সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের আমরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসব। স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ইতিমধ্যে এ ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
“শিগগিরই অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্যও আমরা এ ব্যবস্থা ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে চালু করব।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন পেনশন ৪টি স্কিম নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এ স্কিমগুলো হলো প্রবাস- প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীদের জন্য, প্রগতি- বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য, সুরক্ষা-স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য এবং সমতা-দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী নাগরিকদের জন্য।
তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার ফান্ড পরিচালনা ব্যয় সরকার বহন করায় এবং বিনিয়োগ মুনাফা জামাকারীদের মধ্যে বিভাজন হওয়ায় এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন স্কিম। ১৮ বছরের অধিক সব বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব হলে সবাই একটি সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতাভুক্ত হবেন, যা ভবিষ্যতে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
“ইতোমধ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্লাটফর্মে সর্বজনীন পেনশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এখন যে কোনও ব্যক্তি অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন এবং অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস-এমএফএসের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। অনলাইনেই তিনি তার পেনশন হিসাবে জমার পরিমাণ, প্রাপ্ত লভ্যাংশ ইত্যাদি সরাসরি দেখতে পারবেন।”
“তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সীমিত বা তথ্য প্রযুক্তি নেই এমন ব্যক্তিরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইন্টারনেট ক্যাফে ইত্যাদি স্থানে নিবন্ধন সম্পাদন করতে পারবেন।”
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর উদ্যোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ, যা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আর্থিক মুক্তির সনদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ পেনশন ব্যবস্থাপনার তহবিল পরিচালনার ব্যয় সরকার বহন করায় ও বিনিয়োগের মুনাফা জমাকারীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ায়, এটি হবে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পেনশন কর্মসূচি।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোয় গিয়েও সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির জন্য নিবন্ধন করা যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান না থাকা বা কম জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। চাঁদা জমা দেওয়া যাবে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ, নগদ ইত্যাদির মাধ্যমেও চাঁদা জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে। একজন চাঁদাদাতা অনলাইনেই সরাসরি দেখতে পারবেন তার জমা চাঁদার মোট টাকা ও লভ্যাংশের পরিমাণ।
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতাভুক্ত করার ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “ঘোষণা তো স্পষ্ট। গত ১ জুলাই থেকে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা এবং আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে তাদের ছাড়া অন্য সব সরকারি চাকরিতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসবেন।”
‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকারী দপ্তর। তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক) কিছু বলার থাকলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলবেন। যেহেতু সিদ্ধান্তটি নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।”
“শুনছি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারের সঙ্গে বসবেন। আশা করছি, একটা সম্মানজনক সমাধান হবে।”
কেমন হবে ‘সেবক’ পেনশন স্কিম
‘সেবক’ চালুর কাজ এখনও শুরু হয়নি। তবে পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ‘সেবক’ স্কিম অনেক ‘প্রত্যয়’ এর আদলেই হবে। ৩০ বছর ধরে একজন সরকারি কর্মচারি মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দিলে তার নিজ বেতন থেকে চাঁদা জমা হবে ৯ লাখ টাকা; আর সরকারের তহবিল থেকে জমা হবে আরও ৯ লাখ টাকা। ওই কর্মচারী যদি ৭৫ বছর বয়সে মারা যান, তাহলে ১৫ বছরে পেনশন পাবেন ১ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪০০ টাকা, যা ওই কর্মচারীর নিজ জমার ১২ দশমিক ৪৭ গুণ। পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে বলে এ অঙ্ক আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। চাঁদার পরিমাণ বেশি হলে পেনশনের পরিমাণও বেশি হবে।
সেবক পেনশন স্কিমে কি স্বামী/ স্ত্রীর আজীবন পেনশন পাবেন কি না-এ বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সেবক পেনশন স্কিম নিয়ে মাত্র কাজ শুরু করা হয়েছে। এখনও কোনো কিছুই ঠিক হয়নি। ‘প্রতয়’সহ আগে চারটি স্কিমের মতো নীতিমালা জারি করলেই জানা যাবে, ‘সেবক’ স্কিমে কি কি সুবিধা থাকবে।
“উত্তরাধিকার হিসেবে স্বামী/স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবে কিনা-সেটাও জানা যাবে। তবে বিএসআর রুলস (বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস) মোতাবেক সরকার চাইলে সরকারি সুবিধা সংকোচন করতে পারে না। এক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে হয়। সেবক পেনশন স্কিমটি জারি হলেই কেবল এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।”
কমেন্ট