গত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬.১২%
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিবিএস গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা শুরু করেছে।
বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিবিএস গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা শুরু করেছে।
সেই হিসাবে এ নিয়ে গত অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেল।
এর আগে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
গত ২১ মে বিবিএস জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সাত মাসের প্রাক্কলন অনুযায়ী পুরো অর্থবছরে জিডিপির ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল।
এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
বিদায়ী অর্থবছরে সরকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে শিল্প, সেবা ও কৃষি- সব খাতেই প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে শিল্প খাতে। এছাড়া কৃষি খাতে ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ ও সেবা খাতে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে স্থির মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
বিবিএসের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রাক্কলন করে আসছি।
“জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাবে রিয়েল ড্যাটা (প্রকৃত উপাত্ত) ধরে করা হয়। আর বাৎসরিক প্রাক্কলন প্রতিবেদন তৈরি করা হয় অনুমানের ভিত্তিতে। সে হিসাবে জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনেকটাই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যায়।”
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের তিন কিস্তি ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার।
এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে।
সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে।
এতদিন পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।
সে হিসাবেই গত ২০ মে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে জানানো হয়।
অর্থবছরের সাত মাস (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছিল বিবিএস।
অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সংকটের মধ্যে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকে আমি খুবই ভালো বলে মনে করি। তবে চূড়ান্ত হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি থাকবে বলে মনে হয় না। কেননা, দিন যতো যাচ্ছে, আমাদের অর্থনীতির সূচকগুলো খারাপের দিকে যাচ্ছে।”
“তবে আমি আগেও বলেছি, এখনও বলছি, কঠিন এই সংকটের সময়ে আমরা যদি ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি তাও যথেষ্ট। প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে এখন আমাদের মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়তে হবে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে হবে।”
কমেন্ট