আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ী নেতাদের
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “দুষ্কৃতিকারীদের ধ্বংসযজ্ঞ অবশ্যই রুখে দিতে হবে। এর সঙ্গে ছাত্ররা জড়িত নয়। সারাদেশে কিছু দুষ্কৃতিকারী এ তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তিন বাহিনীর প্রধানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়।
গত দুই দিনের অরাজক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তারা বলেছেন, কারখানায় অগ্নিসংযোগ, থানায় হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর করছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনাকে আরও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের পক্ষ থেকে। এতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানসহ সারাবিশ্বের কাছে দেশের ইমেজ সঙ্কট বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে অর্জিত সাফল্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) রাজধানী ঢাকার বনানীতে প্লাটিনাম গ্র্যান্ড হোটেলে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে স্বাগত জানান ব্যবসায়ী নেতারা।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আস্থা রেখে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, সারাবিশ্বে তার সুনাম আছে। পোশাক খাতের উন্নয়েন তিনি কিছু কাজও করেছেন। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই একরকম নিস্ক্রিয় রয়েছে। এমন পেক্ষাপটে আইসিসিবির ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। অন্যদের মধ্য বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সদ্যসাবেক সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সাবেক তিন সভাপতি স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এ মতিন চোধুরী ও আব্দুল হাই সরকার।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “দুষ্কৃতিকারীদের ধ্বংসযজ্ঞ অবশ্যই রুখে দিতে হবে। এর সঙ্গে ছাত্ররা জড়িত নয়। সারাদেশে কিছু দুষ্কৃতিকারী এ তাণ্ডব চালাচ্ছে।”
আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ব্যবসায়ীদের অনেকেরই চাপে থাকার অভিযোগ জানিয়ে তিনি বলেন, “ওই সময়টিতে পরিস্থিতি এমন ছিল- হয় আপনি আমার পক্ষে থাকবেন, নাইলে আপনি আমার বিপক্ষে। মাঝে কোনও অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ছিল না।”
ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় অনেক প্রাণহানি ও কারফিউ জারির পর ব্যবসায়ী নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তার পক্ষে যেসব বক্তব্য দেন সে সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, “যেহেতু আমাদের ঘাড়ের ওপর দুই মাথা নেই, সেজন্য সরকার প্রধানের সঙ্গে মিটিংয়ে আমন্ত্রণ জানালে আমাদের আপত্তি করার সুযোগ ছিল না।”
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, “যে অন্তর্বর্তী সরকার আসবে সেটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমরা যারা উৎপাদন ও রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাদের ঘণ্টা-মিনিট হিসাব করে কাজ করতে হয়। গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন কারখানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুট হচ্ছে।
“এ পরিস্থিতিতে আমরা কারখানা চালাতে পারছি না। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা চারটি বিষয় বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। এগুলো হচ্ছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, কারখানা চালুর ব্যবস্থা করা, মানুষের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা এবং থানা ও পুলিশকে সক্রিয় করা।”
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি জানান, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ও কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে (মঙ্গলবার) তিনি সেনাবাহিনী প্রধানসহ তিনি বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন সেনাবাহিনীর এই সহযোগিতা চেয়েছেন বলে জানান তিনি।
স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ছাত্র-জনতার ত্যাগের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা উদ্বেগ জানাচ্ছেন এ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে। সময়মতো পণ্য হাতে পাবেন কি-না এ নিয়ে তাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা আছে।
তিনি বলেন, অনেকে বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাস করতে পারছে না। কারখানায় পণ্যের স্তুপ হয়ে আছে। ক্রেতারা তাদের রপ্তানি আদেশের প্রায় ৩০ শতাংশ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, “বায়ার ক্রমাগত আমাদের কাছে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাচ্ছে। বর্তমান সিচুয়েশন দীর্ঘায়িত করা যাবে না। তবে যদি পরিস্থিতির দ্রুতই উন্নতি করা যায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা যায়- তাহলে আমরা কভার করতে পারব।”
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি রিজিওয়ান রাহমান, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী সিমিন রহমান, নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কমেন্ট