আগস্টে মূল্যস্ফীতি খানিকটা কমেছে
আগস্ট মাসে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের আগস্ট মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের আগস্টে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১১০ টাকা ৪৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতির পারদ খানিকটা কমেছে। জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল; খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
আগস্টে তা কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নেমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নেমেছে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশে।
আগস্ট মাসে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের আগস্ট মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের আগস্টে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১১০ টাকা ৪৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। এরপর রাজনৈতিক পালাবদল হলে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে অর্থনীতি। যার প্রভাবেই আগস্টে এসে কিছুটা কমেছে মূল্যস্ফীতি, যদিও এখনও দুই অঙ্কের ঘরেই রয়েছে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওয়েবসাইটে রবিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগস্ট মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। জুলাইয়ে এই মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা এর আগের ১৩ বছরের মধ্যে রেকর্ড।
সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি কমেছে ১ দশমিক ১৭ শতাংশীয় পয়েন্ট।
বছর বা মাসের ব্যবধানে খাদ্য, কাপড়, পোশাক, বাড়ি, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য, তাকেই বলা হয় মূল্যস্ফীতি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে আন্দোলনে পথে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন ছাত্র থেকে ছড়ায় জনতায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে দেওয়া হয় ব্লকেড, যাতে অচল হয়ে পড়ে দেশ। ভেঙে পড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশের বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়। যার কারণে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি, স্থিতিশীল হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।
আর সে কারণেই খানিকটা কমেছে মূল্যস্ফীতি।
যদিও আগস্ট মাসের এই মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত বছরের একই মাসের তুলানায় শুন্য দশমিক ৫৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। গত বছরের আগস্ট মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।
খাদ্য উপখাতে জুলাই মাসের তুলনায় মূল্যস্ফীতি ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমে আগস্টে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। তবে আগস্টে খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। জুলাই মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
আগস্টে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। জুলাইয়ে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে গতমাসে দেশের শহরাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। এরমধ্যে খাদ্য উপখাতে মূল্যস্ফীতি হয় ১১ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবিএসের মূল্য ও মজুরি উইংয়ের এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বিবিএস মূল্যস্ফীতি বাড়া-কমার কারণ নির্ণয় করে না। দেশের সব জেলা ও বাছাই করা কিছু উপজেলা বাজার থেকে মূল্য সংগ্রহ করে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়।
“তবে আমাদের মনে হয়েছে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের কারণ সারাদেশে গণ পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হয়েছে। এর ফলে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্যপরিবহণ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যার কারণে বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল।”
তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে গণ পরিবহণ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় বাজার জোগান বেড়েছে, এরফলে মূল্যও কিছুটা কমেছে; উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।
মজুরি সূচক ৭.৯৬ শতাংশ
মানুষের আয় বেশি বাড়লে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তা কিনতে তেমন সমস্যা হয় না। কিন্তু দেশে দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধির হার কম।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, আগস্ট মাসে জাতীয় মজুরি হার ছিল ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, এর মানে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, মজুরি সেই হারে বাড়েনি। গ্রাম-শহরনির্বিশেষে ১৪৫টি নিম্ন দক্ষতার পেশার মজুরির ওপর হিসাব করে থাকে বিবিএস।
মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি পড়ে। বিবিএস বলছে, দেশের প্রায় ৮৬ শতাংশ মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। দেশে এরকম কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছয় কোটি মতো।
বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, গত দুই বছর ধরে মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক শূন্য তিন শতাংশে ওঠে।
এভাবে প্রতি মাসেই বেড়ে আগস্টে ৭ দশমিক ৯৬ শতাংশে উঠেছে।
কমেন্ট