ভারতীয় ঋণের প্রকল্প চলমান থাকবে

ভারতীয় ঋণের প্রকল্প চলমান থাকবে

মঙ্গলবার সচিবালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের একথা বলেন।

ভারতীয় ঋণের প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেছেন, “ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় চলমান প্রকল্পগুলো বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোর কাজ চলবে। শুধু তাই নয়, উভয় দেশের স্বার্থ বিবেচনায় আরও প্রকল্প নেওয়া হতে পারে।”

মঙ্গলবার সচিবালয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের একথা বলেন।

সালেহউদ্দিন বলেন, “ভারত বড় প্রতিবেশী দেশ। বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ যে একটা ভালো জায়গা, তাকে (প্রণয় ভার্মা) সে কথা জানানো হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য তাদের সহযোগিতা অক্ষুণ্ন থাকবে। বৈঠকে এলওসির তিনটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

“এলওসির প্রকল্পগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখেই সেগুলো হাতে নেওয়া হয়েছিল। এসব প্রকল্প বন্ধ হবে না।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় থাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ছাড় নিয়ে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলোর সমাধান হয়েছে। আগামীতে প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন এবং বাস্তবায়ন নিয়ে আরও আলোচনা হবে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষেত্র আছে। এগুলো কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় ওঠে এসেছে।”

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “ভারত সরকারকে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে সহযোগিতা জোরদারের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনারকে আশ্বস্ত করেছি, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ একটি খুব ভালো জায়গা। তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছে।”

ভারতীয় হাইকমিশনার আশ্বাস দিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে গুণগত মানসম্পন্ন আরও পণ্য নেবে ভারত। যদিও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান করা হবে। একই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা খাতেও ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করবে।

ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারত যে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়, এ বৈঠকই তার প্রমাণ। দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে এলওসির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে এবং ভারত এ ব্যাপারে ইতিবাচক।”

ভারতীয় ঠিকাদার চলে যাওয়ায় চলমান কিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকা সম্পর্কিত প্রশ্নে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, “ভারত সরকার বাংলাদেশে কোনো লাইন অব ক্রেডিট প্রকল্প বন্ধ করেনি। প্রকল্পগুলো চলছে। এগুলো অনেক বড় প্রকল্প এবং বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত।”

ঠিকাদাররা কাজ শুরু করতে ফিরে আসবে। তিনি বলেন, উপদেষ্টাকে ভারতীয় অর্থায়নের কিছু প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হয়ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সমস্যা পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।”

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরইডি) থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম এলওসি চুক্তি হয় ২০১০ সালের আগস্ট মাসে। অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। দ্বিতীয় চুক্তি ২০০ কোটি ডলারের। সই হয় ২০১৬ সালের মার্চ মাসে। ২০১৭ সালের মার্চে ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয় ৪৫০ কোটি ডলারের।

ভারত ২০১০, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিনটি এলওসিতে বাংলাদেশকে মোট ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কাঙ্ক্ষিত হারে অর্থছাড় হয়নি।

সব মিলিয়ে ছাড় হয়েছে মাত্র ১৮০ কোটি ডলার। তিনটি এলওসিতে সড়ক ও রেল যোগাযোগ, জ্বালানি, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অবকাঠামো খাতে এ পর্যন্ত ৩৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শেষ হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন আটটি। বাকি প্রকল্পগুলো পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ কিংবা প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির পর্যায়ে রয়েছে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর ভারতীয় ঠিকাদার চলে যাওয়ায় দেশটির ঋণের চলমান কয়েকটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ভারতীয় ঋণের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চলমান প্রকল্পের পাশাপাশি যত প্রকল্প প্রস্তাব এসেছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। ভারতীয় তিনটি এলওসির চলমান এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোও পর্যালোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে সভা শনিবার, ব্যয় ৫ কোটি টাকা পরবর্তী

গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে সভা শনিবার, ব্যয় ৫ কোটি টাকা

কমেন্ট