সংস্কারের জন্য মানুষ অস্থির হয়ে গেছে: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন
শনিবার রাজস্ব আহরণে প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট পরিবর্তন ও সংশোধন বিষয়ক দিনব্যাপী এক আলোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একমাসে সংস্কার কাজ দেখার জন্য দেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
শনিবার রাজস্ব আহরণে প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট পরিবর্তন ও সংশোধন বিষয়ক দিনব্যাপী এক আলোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ঢাকার আগারগাঁয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের মাল্টিপারপাস হলে এই আলোচনার আয়োজন করে বিসিএস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লুৎফুল আজিমের সভাপতিত্বে আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালেহউদ্দিন বলেন, “সংস্কার নিয়ে এমনিতেই দেশের লোকজন একটু অস্থির হয়ে গেছে একমাসে। একমাস হয়ে গেল, তোমরা কিছু দেখাচ্ছ না…। আমি অন্তত বলি, আমরা আর্থিক খাতে মোটামুটি কিছু করেছি।”
এ প্রসঙ্গে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “আমাকে বলল, স্যার আপনার ক্ষেত্রে একটু দেখা যাচ্ছে– আর্থিক খাত, ব্যাংকিং খাত আর এডুকেশন খাতে কিছু হচ্ছে। অন্য খাতগুলো কিন্তু আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না।
“আমি বলি, ওগুলোতো সফট সেক্টর। সময় লাগে, স্বাস্থ্য বা অন্যগুলোতে। আর্থিক খাত– এটা ধরা যায়, রেজাল্টও পাওয়া যায়। আর অন্য খাতগুলো কিন্তু একটু…।”
সফট সেক্টরের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “সফট সেক্টর বলি যে ওগুলো ধরা, ম্যানেজ করা একটু ডিফিকাল্ট। সোশাল সেক্টর বা এরকম এগুলো একটু সময় লাগে।”
এ সময় বর্তমান সরকারের সংস্কার কাজের মূল্যায়ন করতে গিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, “তবু যাক, স্টারটিং আমরা মোটামুটি করেছি এবং ভবিষ্যতে যেন আমরা দ্রুত লক্ষ্য যেন অর্জন করতে পারি সেটার জন্য আপনাদের সবার সহযোগিতা দরকার।”
যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “কাল (রবিবার) ইউএস’র হাই লেভেল টিমের সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হবে। পরশুদিনও (সোমবার) কিছুটা আলাপ হবে। আমাদের অর্থনীতিতে তারা কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে… আমরা কী করব…।
“অন্তত কর আহরণ ব্যবস্থাপনায় আমরা যেন বলতে পারি, ট্যাক্স রিফর্মটা আমরা শুরু করেছি।“
সালেহউদ্দিন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে কথায় কথায় বলা যাবে, আমরা আমাদের ট্যাক্স অফিসারদের উজ্জীবিত করেছি। তারা কিছুটা আশ্বস্ত হবে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সংস্কারতো আছেই।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “বাজেটে প্রতিবছর যে পরিমাণ রাজস্ব দরকার এনবিআর সে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে না পারায় আমাদের ঘাটতি বাজেট করতে হচ্ছে। এর ফলে আমাদের ঋণ বাড়ছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা বেশি দেনার দায় চাপিয়ে দিয়ে যাচ্ছি।”
বেসরকারি খাতকে রাজস্ব আহরণের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বেসরকারি খাত, তারাও চায় তাদের দেওয়া রাজস্বের টাকা যেন অপচয় না হয়। আবার তারা যেন মনে না করে, তাদের উপর জুলুম করা হচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে সমন্বিতভাবে সংস্কার করতে হবে।”
এসময় তিনি সকল কর কর্মকর্তাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
কমেন্ট