সংস্কারে ২ বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক
মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এ সহায়তার কথা জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কার কাজে সহায়তা করতে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি (২ বিলিয়ন) ডলার নতুন ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১২০ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২৪ হাজার কোটি টাকা।
নতুন এই অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, বন্যা মোকাবিলা, বায়ুর গুণমান উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতের মত প্রকল্পগুলোতে ব্যয় করা হবে।
মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক এ সহায়তার কথা জানান।
আবদুলায়ে সেক বলেন, “আমরা আপনাকে যত তাড়াতাড়ি ও যতটা সম্ভব সহায়তা করতে চাই।”
“বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রয়োজনে সহায়তা করবে,' বলেন বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান।
“নতুন প্রতিশ্রুতি ছাড়াও বিশ্বব্যাংক সরকারের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিদ্যমান কর্মসূচি থেকে আরও প্রায় অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার পুনঃব্যবহার করবে।”
“বিদ্যমান প্রকল্পগুলোর অর্থ পুনর্বিন্যাস হলে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে যে সহজ শর্তে ঋণ ও অনুদান দেবে তার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার।”
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে আব্দুলায়ে সেক বলেন, “নতুন প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক প্রায় ১০০ কোটি ডলার অর্থায়ন বিদ্যমান প্রকল্পগুলো থেকে পুনর্বিন্যস্ত করবে।
সেক বলেন, “এই অতিরিক্ত অর্থায়নসহ বিশ্ব ব্যাংক এই অর্থবছরে বাংলাদেশকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার সহজ ঋণ ও অনুদান দেবে, যা সংস্কার কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করবে।”
“বাংলাদেশের জন্য এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে সেই ২০ লাখ মানুষের জন্য, যারা প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে।”
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ সময় আব্দুলায়ে সেককে বলেন, ১৫ বছরের ‘দুর্ব্যবস্থাপনা’ কাটিয়ে বাংলাদেশের জন্য সংস্কারগুলো অর্থায়নের ক্ষেত্রে এবং নতুন যাত্রা পুনরায় শুরু করতে বিশ্ব ব্যাংকের আরও নমনীয়তা থাকতে হবে।
তিনি বলেন, “আমাদের এই ধ্বংসাবশেষের মধ্য থেকে নতুন কাঠামো গড়তে হবে। বড় উদ্যোগ নিতে হবে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমি বলব, আমাদের সাহায্য করুন এবং আমাদের দলের অংশ হোন।”
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ‘একনায়কতন্ত্রের’ শাসনামলে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চুরি করা কোটি কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে বিশ্বব্যাংককে অনুরোধ জানান প্রধান উপদেষ্টা।
ইউনুস বলেন, “আপনাদের কাছে চুরি হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রযুক্তি রয়েছে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা প্রয়োজন।”
বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চুরি হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেন, “আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পেরে খুশি।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশে ডেটার স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা, কর সংগ্রহের ডিজিটাইজেশন এবং আর্থিক খাতের সংস্কারে সহায়তা করতে আগ্রহী।
এ সময় ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ তার প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে এবং প্রধান সংস্কারগুলো গ্রহণ করার জন্য এই একবারের জীবনের সুযোগ হারাতে পারবে না। এটি একবার হারালে আর কখনো ফিরে আসবে না।”
আব্দুলায়ে সেক জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। ঢাকার দেয়ালে তরুণদের আঁকা গ্রাফিতি ও ম্যুরাল দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন বলেও জানান।
সেক বলেন, “আমার ৩০ বছরের কর্মজীবনে আমি এমন দৃশ্য কোথাও দেখিনি। আমাদের তাদের ক্ষমতায়ন করতে হবে।”
তিন বছরে ৪-৫ বিলিয়ন ডলার দেবে আইএসডিবি
আগামী তিন বছরে একটা প্যাকেজ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইএসডিবি)। বিভিন্ন খাতের জন্য এ অর্থ দেবে জেদ্দাভিত্তিক এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে আইডিবির রিজিওনাল হাব ম্যানেজার নাসিস সোলাইমানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সৌজন্য বৈঠকের পর উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নাসিস সোলাইমান তাকে জানিয়েছেন সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটসহ ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে এ ঋণ দেওয়া হবে। প্রান্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণেও ঋণের অর্থ ব্যয় করা যাবে। এ ছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও ঋণ দেবে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক।
কমেন্ট