সংস্কারে সহায়তার অঙ্গীকার বিশ্বব্যাংকের
দুই দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মার্টিন রেইজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন সফররত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সুযোগ এসেছে, যা দীর্ঘদিন করা হয়নি।
দুই দিনের ঢাকা সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার মার্টিন রেইজার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে তার সফর শেষ করেছেন। তিনি বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে মার্টিন রেইজার বিশ্বব্যাংকের চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এই অর্থায়ন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে, সাম্প্রতিক বন্যা থেকে পুনরুদ্ধার করতে, উন্নত সেবা প্রদানের জন্য সরকারি ও আর্থিক খাতের সংস্কার, একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাত গড়ে তুলতে এবং বায়ুর গুণমান ও স্বাস্থ্যের উন্নত করতে সহায়তা করবে।
রেইজার বলেন, “বাংলাদেশের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের সুযোগ রয়েছে, যা দীর্ঘদিন ধরে সমাধান করা হয়নি। বিশ্বব্যাংকের চলমান ঋণ-সহায়তা এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিক সুশাসনের উন্নতি এবং প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রবেশকারী ২০ লাখ বাংলাদেশি যুবকদের জন্য আরও ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে মনোযোগ দিচ্ছি।”
মার্টিন রেইজার বাংলাদেশে জুলাই ও আগস্টে মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। গুরুতর আহত ছাত্র ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংক দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলায় সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও জীবিকা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশের উদার সিদ্ধান্তের জন্যও প্রশংসা করেন। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ৭০ কোটি ডলারের কর্মসূচি অনুমোদন করেছে বলে জানান মার্টিন রেইজার।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মার্টিন রেইজার অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে এবং সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা উন্নত করতে সহায়তা করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেন।
মার্টিন রেইজার বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত প্রকল্পের বিদ্যমান পোর্টফোলিও থেকে বাংলাদেশের জন্য উপলব্ধ যথেষ্ট সম্পদ রয়েছে। বাংলাদেশকে একটি নতুন টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে উন্নীত করার জন্য সরকারের সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকারের জন্য অতিরিক্ত তহবিল প্রদানের জন্য প্রয়োজন অনুসারে তা পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে সহায়তাকারী প্রথম উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে বিশ্বব্যাংক একটি। ৫০ বছরের অংশীদারত্বে বিশ্বব্যাংকের অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ এবং দেশটিকে তার উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলো মোকাবেলায় প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের ১৬ বিলিয়ন ডলারের ৫২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক সাহায্য করতে প্রস্তুত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মূল অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হতে বিশ্বব্যাংক প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মার্টিন রাইজার ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ মন্তব্য করেন।
অর্থনীতির চলমান সংকট কাটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপে বৃহত্তর সমর্থনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় মার্টিন রাইজার বলেন, “আমাদের উপর নির্ভর করুন। আমরা সাহায্য করতে প্রস্তুত।
“বিশ্বব্যাংক সরকারের সংস্কার এজেন্ডা দেখে উচ্ছ্বসিত। এখনই বাংলাদেশ সফর করা মূল্যবান। অনেক প্রত্যাশা আছে।”
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ব্যাংকিং, কর, শুল্ক, ভ্যাট, ডিজিটাইজেশন, দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপে সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
বিশ্বব্যাংকের সহায়তাকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি থেকে মুক্তি পেতে এবং একটি নতুন সূচনা করতে জনগণের কাছ থেকে ব্যাপক ম্যান্ডেট পেয়েছে।
“এটি সংস্কারের মৌসুম। আমরা এখনই শুরু করতে চাই। জুলাই-আগস্টে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান বিদ্যমান ব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কারের জন্য মাঠ প্রস্তুত করেছে।”
“আমরা অতীতে ফিরে যেতে চাই না। একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই” বলেন ড. ইউনূস।
কমেন্ট