বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি
সাধারণত অর্থ ছাড়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমই থাকে, আগের অর্থবছরগুলোতে চিত্র ছিল এমনটাই। তবে দেশের অস্থির সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি অর্থ এসেছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ গেছে ঋণ শোধ করতে।
বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার মোটা অঙ্কের ঋণ-সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেলেও অর্থবছর শুরু হয়েছে বেশ খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) মঙ্গলবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের মোট ঋণ, প্রতিশ্রুতি ও সুদ-আসল পরিশোধসহ বিদেশি ঋণের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
তাতে দেখা যায়, এই দুই মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মাত্র ৪৫ কোটি ৮২ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে আগে পাওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৫৮ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্ট—এই দুই মাসে যতো ঋণ-সহায়তা পাওয়া গেছে তার চেয়ে ১৩ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করা হয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ছিল একই চিত্র। ওই মাসে বাংলাদেশ দাতাদের কাছে পুঞ্জিভূত পাওনার কিস্তি বাবদ পরিশোধ করেছিল ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; পেয়েছিল ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
অর্থাৎ জুলাই মাসে দাতাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ ঋণ-হায়তা পাওয়া গিয়েছিল তার চেয়ে প্রায় ৩ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “গত কয়েক বছর আগে থেকে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প শেষ করেছে বাংলাদেশ। এসব প্রকল্পের কিস্তি পরিশোধ শুরু হয়েছে। তাই এবছর আগের বছরের তুলনায় বেশি ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে।”
তবে পরের মাস থেকে চিত্র পরিবর্তন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, “হয়ত পরের মাসে দাতাদের কাছ থেকে অর্থ ছাড় বাড়বে। তখন দাতাদের পাওনা কিস্তি পরিশোধের পর এই রকম নেতিবাচক প্রবণতা থাকবে না।”
ইআরডি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, জুলাই-আগস্ট সময়ে বিদেশি ঋণ ছাড় গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ কমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে ৪৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ঋণ ছাড় করেছে দাতারা। গত অর্থবছরের একই সময়ে করেছিল ৭৩ কোটি ৯১ লাখ ডলার।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের শুরু থেকে দেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। আর ওই মাসে বিদেশি ঋণ ছাড় হয় ৩৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
পরের মাসে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে। ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। দুই দিন বাদে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার যাত্রা করে।
এই মাসে বিদেশি অর্থ ছাড় হয়েছে মাত্র ১০ কোটি ডলার।
সাধারণত অর্থ ছাড়ের তুলনায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমই থাকে, আগের অর্থবছরগুলোতে চিত্র ছিল এমনটাই। তবে দেশের অস্থির সময়ে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি অর্থ এসেছে, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ গেছে ঋণ শোধ করতে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে সবচেয়ে বেশি ১৩ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। ৪ কোটি ৬২ লাখ ৪০ হাজার ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে রাশিয়া দিয়েছে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ভারত ছাড় করেছে ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার ডলার। এই দুই মাসে চীন কোনো অর্থ ছাড় করেনি।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৯৮৯ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার (৯.৮৯ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি।
এর মধ্যে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার (৩.৩৫ বিলিয়ন) ডলার।
হিসাব করে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট ঋণ-সহায়তার ৩৪ শতাংশ চলে যায় আগের নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। এর মধ্যে আসল ছিল ২ বিলিয়ন ডলার। আর সুদ ছিল ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯২৬ কোটি ৬৮ লাখ (৯.২৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৯৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। আসল বাবদ শোধ করা হয়েছিল ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
কমেন্ট