সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি নামল এক অঙ্কের ঘরে

সরকারি হিসাবে মূল্যস্ফীতি নামল এক অঙ্কের ঘরে

এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হয়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য দিলো পরিসংখ্যান ব্যুরো।

দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি আরও কমার খবর দিয়েছে অন্তবর্তী সরকার।

সরকারি হিসাব গণনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বুধবার জানিয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমে এসেছে। আগের মাস আগস্টে এই হার ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এই হার ছিল এক অঙ্কের ঘরে—৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে গত জুলাইয়ে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখেছিল বাংলাদেশ। এরপর ক্ষমতার পালাবদল হয়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এর দুই মাসেই মূল্যস্ফীতি কমার তথ্য দিলো পরিসংখ্যান ব্যুরো।

বিবিএসের মূল্যসস্ফীতির তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলে আসছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে এই প্রশ্ন বার বার তুলেছেন তারা।

দেশের প্রায় সব অর্থনীতিবিদ বলেছেন, পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে তথ্য প্রকাশ করে বাস্তবে তা আরও বেশি। বিবিএসের মূল্যস্ফীতির তথ্যের সঙ্গে বাজারের জিনিসপত্রের দামের বাস্তব প্রতিফলন নেই।

গত ৯ মে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে চালঞ্চ্যকর তথ্য দিয়েছিল সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বর্তমানে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ।

বিআইডিএসের একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে মহাপরিচালক বিনায়ক সেন এ কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, বাড়তি এ মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ অসুবিধায় রয়েছে।

বিনায়ক সেন বলেন, “সম্প্রতি বিআইডিএসের পক্ষ থেকে দেশের সব জেলা থেকে তথ্য নিয়েছি। এরপর একটি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি হিসাব করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১৫ শতাংশ।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওয়েবসাইটে বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে (ডাবল ডিজিট) ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য বহির্ভূত হয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।

জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠে যায়। আগস্টে তা কিছুটা কমে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছিল।

বছর বা মাসের ব্যবধানে খাদ্য, কাপড়, পোশাক, বাড়ি, সেবা ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানের মূল্য বৃদ্ধির যে পার্থক্য, তাকেই বলা হয় মূল্যস্ফীতি।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসের শুরু থেকে আন্দোলনে পথে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই আন্দোলন ছাত্র থেকে ছড়ায় জনতায়। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে দেওয়া হয় ব্লকেড, যাতে অচল হয়ে পড়ে দেশ। ভেঙে পড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশের বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হয়। যার কারণে বেড়ে যায় নিত্যপণ্যের দাম।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে পরিস্থিতি, স্থিতিশীল হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সেপ্টেম্বরে শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি ছিল। সেপ্টেম্বরে গ্রামীণ এলাকায় সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য উ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

অন্যদিকে গতমাসে দেশের শহরাঞ্চলে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এরমধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবিএসের মূল্য ও মজুরি উইংয়ের এক কর্মকর্তা এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বিবিএস মূল্যস্ফীতি বাড়া-কমার কারণ নির্ণয় করে না। দেশের সব জেলা ও বাছাই করা কিছু উপজেলা বাজার থেকে মূল্য সংগ্রহ করে মূল্যস্ফীতির হিসাব করা হয়।

“তবে আমাদের মনে হয়েছে জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের কারণ সারাদেশে গণ পরিবহণ চলাচল ব্যাহত হয়। এর ফলে দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্যপরিবহণ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যার কারণে বিশেষ করে খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। সে কারণে জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল।”

তবে আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে গণ পরিবহণ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসায় বাজার জোগান বেড়েছে, এরফলে মূল্যও কিছুটা কমেছে; উল্লেখ করেন ওই কর্মকর্তা।

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি পরবর্তী

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি

কমেন্ট