এডহক কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে অর্থনীতি সমিতি
“বাংলাদেশের চার হাজার অর্থনীতিবিদের ঐতিহ্যবাহী একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করে অবৈধ এই এডহক কমিটি গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ব্যানারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির যে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে সমিতির নির্বাচিত কমিটি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এই এডহক কমিটি গঠনের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করেছে।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থনীতি সমিতি বলেছে, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির বিপরীতে নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের প্রার্থীদের নিয়ে যে এডহক কমিটি গঠনের দাবি করা হয়েছে, তা যেকোনো সভ্য সমাজের আইন ও রীতিনীতির পরিপন্থী।
নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ অক্টোবর কয়েকটি জাতীয় সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালে বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ব্যানারে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির নজরে এসেছে। প্রকাশিত সংবাদে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির বিপরীতে নির্বাচনে পরাজিত প্যানেলের প্রার্থীদের সমন্বয়ে যে এডহক কমিটি গঠনের দাবি করা হয়েছে, তা যেকোনো সভ্য সমাজের আইন ও রীতিনীতির পরিপন্থী।
“বাংলাদেশের চার হাজার অর্থনীতিবিদের ঐতিহ্যবাহী একমাত্র পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র বিরোধিতা ও প্রতিবাদ করে অবৈধ এই এডহক কমিটি গঠনের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি স্বাধীন বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৭৪ সালে গৃহীত গঠনতন্ত্রবলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদদের নেতৃত্বে নির্বাচিত কার্যনিবাহক কমিটির স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত হয়ে আসছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও ইন্টারন্যাশনাল ইকনোমিক অ্যাসোসিয়েশনের (আইএ) নিবন্ধিত এই সমিতি সরকারের সকল আইন ও বিধি-বিধান এবং আইএ—এর নিয়মকানুন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে অর্থনৈতিক, বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতি শাস্ত্র ও সামাজিক বিজ্ঞান শিক্ষা অনুসন্ধান ও গবেষণা উন্নয়নে উৎসাহ ও সহায়তা প্রদানে সেমিনার ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক পেশাজীবীদের স্বার্থরক্ষা ও মানোন্নয়নে নিয়মিত সাময়িকী, জার্নাল ও গ্রন্থ প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশের প্রান্তিক পেশাজীবী মানুষ অর্থাৎ কৃষক-শ্রমিক-প্রবীণ-নারী-শিশুসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অর্থনৈতিক বিষয়াদির ওপর সভা, সম্মেলন ও আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে সর্বস্তরের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে।
বাংলাদেশে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য-বৈষম্য, কালোটাকা-অর্থপাচার, ঘুষ-দুর্নীতি প্রভৃতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণাভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
অথচ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’ সৃষ্টি করে কতিপয় ব্যক্তি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার, কুৎসা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা চালিয়ে আসছেন এবং একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ তুলে এডহক কমিটি গঠনের কথা বলছে। নির্বাচিত কার্যনির্বাহক কমিটি মনে করে, সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক গত ১৮ মে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন সাধারণ সভা ও কার্যনির্বাহক কমিটি নির্বাচনে ২৯টি পদে প্রার্থী দিয়ে প্যানেল পরিচয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে সহস্রাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে বিশাল মঞ্চে বিজয়ী প্যানেলকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার সত্বেও শত শত শিশু-কিশোর-তরুণ ও সাধারণ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বৈষম্যবিরোধী মুখোশে সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড করা সভ্য সমাজের আচরণ হতে পারে না।
উপরন্তু সমিতির বিপুলসংখ্যক সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণ শেষে সবার সামনে গণনাপ্রক্রিয়া সমাপ্ত হয় আন্তর্জাতিকমানের নির্বাচনী সফটওয়্যারে। বিশাল অডিটরিয়ামে সকল প্রার্থী ও সমিতির সদস্যের উপস্থিতিতে বড় স্ক্রিনে প্রতিটি ভোটের তথ্য সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়।
“এরপরও কয়েক মাস পর সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিকারের জন্য সরকারি আইন এবং সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক প্রতিকারের সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক পরিবর্তনকারী এক ক্রান্তিকালে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা শোভন ও সমৃদ্ধ দেশ ও সমাজ গঠনের পথে গুরুতর অন্তরায়।”
“বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি, সদস্যবৃন্দ ও শুভানুধ্যায়ীরা ভাবমূর্তি ও শান্তি বিনষ্টকারী এ ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ড কোনো সময় সমর্থন করবে না।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঐতিহাসিক ছয়দফা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, জাতীয় সংবিধান এবং বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ভূমিকা ও অবদান সর্বজনবিদিত। সৃষ্টিলগ্ন থেকে বাংলাদেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এন হুদা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এম. সোলায়মান মন্ডল, আখলাকুর রহমান, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, এস আর ওসমানী, মমতাজউদ্দিন আহমেদ, আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, মোজাফফর আহমদ, আনিসুর রহমান, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, এ টি এম নুরুল আমিন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মইনুল ইসলাম, তৌফিক আহমদ চৌধূরী, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, আবুল বারকাত, কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ প্রমুখের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি নির্মোহভাবে দেশের যেকোনো সংকট ও ক্রান্তিলগ্নে আপামর মানুষের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।
এ কারণে বাংলাদেশের বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসে রাজনৈতিক, সামরিক, ছদ্ম সামরিকসহ বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচালিত কোনও সরকারই এই সমিতিকে সুনজরে দেখেনি। বরং হুমকি ও বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছে। এমনকি সেমিনার ও প্রশিক্ষণ আয়োজন, সাময়িকী-জার্নাল-গ্রন্থ প্রকাশ কার্যক্রমে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত সামান্য অনুদান সহায়তাও বিভিন্ন শাসনামলে বৃদ্ধি তো দূরের কথা বন্ধও রাখা হয়েছে।
“এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনির্বাহক কমিটি সংশ্লিষ্টদের অর্থনীতি সমিতির গঠনতন্ত্র বিরোধ কার্যকলাপ হতে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।”
গত সোমবার বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানকে সভাপতি করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এডহক কমিটি গঠন করা হয়। তারা গত মে মাসে একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।
কমেন্ট