বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস: অনিশ্চয়তায় প্রবৃদ্ধি নামবে ৪ শতাংশে
এর আগে গত ১২ জুন প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পর এবার বিশ্বব্যাংকও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্বাভাস কমিয়েছে। বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি বলেছে, অনিশ্চয়তার কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ৪ শতাংশে নেমে আসবে।
বুধবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪ শতাংশ।
এর আগে গত ১২ জুন প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংক ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রকাশ উপলক্ষে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকজন সাংবাদিক যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বব্যাংক দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্র্যানজিসকা ওহসর্জ বলেন, “মূলত রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নীতি অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং মালদ্বীপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা পূর্বাভাস গত জুনে দেওয়া পূর্বাভাসের চেয়ে উন্নত করা হয়েছে। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা দেখো দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তার কারণে দেশটিতে বিনিয়োগ ও শিল্পে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে এবং সাম্প্রতিক বন্যার ফলে কৃষিতে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি হবে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গত আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসেবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশে।
চলতি অর্থবছরের পূর্বাভাস কমানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনও কমিয়ে ৫ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়েছে। গত অর্থবছরের জন্য সরকারের সাময়িক প্রাক্কলন ছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোয় নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকা এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আভাসকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাদের পূর্বাভাস তাকেই প্রতিফলিত করছে। স্বল্প মেয়াদে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না। অন্যদিকে বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তবে মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছে বিশ্বব্যাংক। সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, তার ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে আর্থিক খাতে সংস্কার, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানোর পদক্ষেপ, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি ও বাণিজ্য চাঙা হওয়ার বিষয়গুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজনীতি ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বিশ্বব্যাংক বলেছে, তাদের প্রাক্কলন হলো গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। গত বছরের ক্ষেত্রেও তার নিম্নমুখী সংশোধন এনেছে। বিশ্বব্যাংকের আগের প্রাক্কলন ছিল, গত অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরে (২০২৪ সাল) এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা তাদের আগে করা পূর্বাভাসের চেয়ে দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেশি।
এর ফলে এই অঞ্চল অর্থনীতির দিকে থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ধারা বজায় রাখবে।
নারীদের যদি আরও বেশি সংখ্যায় কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসা যায় এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও উদারীকরণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলো তাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রতিবেদনে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।
গত এপ্রিলে এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
কমেন্ট