প্রবৃদ্ধি কমবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি: আইএমএফ

প্রবৃদ্ধি কমবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি: আইএমএফ

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি নিয়ে আরও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের পর এবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) পূর্বাভাস কমিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক সূচক মূল্যস্ফীতি নিয়ে আরও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভা চলাকালে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি।

এর আগে গত এপ্রিলে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ।

গত ১০ অক্টোবর প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে ৪ শতাংশে নেমে আসবে।

এর আগে গত ১২ জুন প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

অন্যদিকে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রতিবেদনে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসবে।

গত এপ্রিলে এডিবির পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ৬ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাম্প্রতিক বন্যার কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে।

মূল্যস্ফীতি বাড়বে

এদিকে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসার পূর্বাভাস থাকলেও আইএমএফ মনে করছে, মূল্যস্ফীতি না কমে বরং বাড়তে পারে।

গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতির গড় হার ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আইএমএফের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলেছিল, খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে চলতি অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় থাকবে। তবে তা গত অর্থবছরের ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশে নামতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে উঠেছিল; খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

আগস্টে তা কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশে নামে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নামে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশে।

সেপ্টেম্বরে তা আরও কমে সার্বিক মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কে (সিঙ্গেল ডিজিট) ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নামে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নামে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশে।

সেপ্টেম্বর মাসে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির অর্থ হলো—গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছরের সেপ্টেম্বরে সেই পণ্য বা সেবা পেতে ১০৯ টাকা ৯২ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।

তবে চলতি মাসে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে সরকার কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। তাতে ডিমের মতো পণ্যের দাম কিছুটা কমে।

তবে বাজারে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও পেঁয়াজের। পণ্যগুলোর দাম কমাতে সরকার শুল্ক–করে ছাড় দিলেও এর সুফল এখনো বাজারে পড়েনি। এই চারটি পণ্যের দাম আরও বাড়ল এমন সময়ে, যখন বাজারে কোনো স্বস্তি নেই।

গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৯ শতাংশের উপরে অবস্থান করছে।

আইএমএফ প্রতি বছর এপ্রিলে এবং অক্টোবরে ‘ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক আউটলুক’ প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দেশভিত্তিক সর্বশেষ হিসাব এবং আগামীর জন্য পূর্বাভাস থাকে। মূলত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন সভা এবং বার্ষিক সভায় এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

বসন্তকালীন সভা হয় এপ্রিলে। আর বার্ষিক সভা হয় অক্টোবরে। গত ২১ অক্টোবর বার্ষিক সভা শুরু হয়েছে। শেষ হবে ২৬ অক্টোবর।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল সভায় যোগ দিয়েছেন। প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার; অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীসহ অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইআরডি’র কর্মকর্তারা রয়েছেন।

বাংলাদেশ আইএমএফের কাছ থেকে বাড়তি ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) ডলার যে ঋণ চেয়েছে, সে বিষয়ে এই সভায় আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে গত আওয়ামী লীগ সরকার ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। সেই হিসেবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারি লক্ষ্যের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী কমে গেলে তা হবে কোভিড মহামারির পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আর্জিত হয়েছে।

বন্ধ হবে না পেনশন স্কিম, গতিশীল করবে ইউনূস সরকার পরবর্তী

বন্ধ হবে না পেনশন স্কিম, গতিশীল করবে ইউনূস সরকার

কমেন্ট