চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯১ শতাংশে নেমেছে

চতুর্থ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৯১ শতাংশে নেমেছে

মূলত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ধসের কারণেই গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে।

গত অর্থবছরের চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চার প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় অর্ধেক।

২০২২-২৩ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে দেশে ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

মূলত শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ধসের কারণেই গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) ৩ দশমিক ৯১ শতাংশে নেমেছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে তা কমে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ অনুযায়ী বিবিএস গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে প্রথমবারের মতো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপির হিসাব করা শুরু করেছে।

সেই হিসাবে এ নিয়ে গত অর্থবছরের প্রথম চার প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধির চিত্র পাওয়া গেল।

এর আগে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৬ দশমিক ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের হিসাব দিয়েছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো।

তবে সোমবার যে হিসাব প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের তথ্যের মধ্যে পার্থক্য দেখা গেছে।

সোমবার প্রকাশিত হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং চতুর্থ বা শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের তথ্য দেওয়া হয়েছে।

গত ২১ মে বিবিএস জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) প্রাক্কলন অনুযায়ী পুরো অর্থবছরে (২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন) ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রাক্কলন করেছিল পরিসংখ্যান ব্যুরো।

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অর্জিত হয় ৭ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। তৃতীয় (জানুয়ারি-মার্চ) ও চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) অর্জিত হয়েছিল যথাক্রমে ৬ দশমিক ৮৮ ও ৬ দশমিক শূন্য চার শতাংশ।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিল তখনকার সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শিল্প, সেবা ও কৃষি- সব খাতেই প্রবৃদ্ধিই কমেছে। এই প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে কৃষি খাতে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর সেবা খাতে ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। শিল্প খাতে হয়েছিল ১০ দশমিক ১৬ শতাংশ। ৫ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সেবা খাতে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) স্থির মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে স্থির মূল্যে জিডিপির আকার ছিল ১২ লাখ ১৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা।

বিবিএসের সংশ্লিষ্ট উইংয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রাক্কলন করে আসছি।

“জিডিপির ত্রৈমাসিক হিসাব রিয়েল ড্যাটা (প্রকৃত উপাত্ত) ধরে করা হয়। আর বাৎসরিক প্রাক্কলন প্রতিবেদন তৈরি করা হয় অনুমানের ভিত্তিতে। সে হিসাবে জিডিপির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনেকটাই চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যায়।”

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের তিন কিস্তি ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার।

এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে।

সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে।

এতদিন পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।

সে হিসাবেই গত ২১ মে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে জানানো হয়।

অর্থবছরের সাত মাস (গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি) পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছিল বিবিএস।

অর্থনীতির গবেষক বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “আমাদের অর্থনীতিতে একটার পর একটা ধাক্কা লেগেই আছে। সেই যে করোনা মহামারি দিয়ে শুরু হয়েছিল। এর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ; এই যুদ্ধ এখনও চলছে। ধাক্কাও লেগে আছে। এর মধ্যে মধ্যপাচ্যের যুদ্ধের ধাক্কাও লেগেছে আমাদের অর্থনীতিতে।”

“এ সব কারণে জিডিপি প্রবৃদ্ধি যে কমে যাবে, সেটা সবাই অনুমান করেছিল। বিবিএসের তথ্যে সেটারই প্রতিফলন হয়েছে।”

অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি পরবর্তী

অস্থিরতায় রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি

কমেন্ট