অস্থিরতার ধাক্কা এডিপি বাস্তবায়নে
অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কার্যক্রমে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের মাত্র ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের এই বাস্তবায়ন গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমকি ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট কম। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে বরাদ্দের ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের এই বাস্তবায়ন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাওয়া রেকর্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে কখনোই এতো কম বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উন্নয়ন কার্যক্রম পরীবিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “গত তিন মাস মূলত প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে সরকার চাহিদা অনুযায়ী অর্থের জোগান দিতে না পারায় এবার এডিপি বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে।”
তিনি বলেন, “অর্থবছরের প্রথম দিকে বৃষ্টি এবং প্রস্তুতি পর্ব থাকায় এমনিতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন একটু কম থাকে। তার ওপর গত তিন মাস ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকায় এবারের বাস্তবায়ন আরও কমে গেছে।”
তবে অর্থের জোগান বাড়ানো গেলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়ন বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
চলতি অর্থবছরের এডিপির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।
আইএমইডির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে, যা মোট এডিপি বরাদ্দের ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার দাবিতে গত জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগস্টের ৫ তারিখে সরকার পতন হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল সেপ্টেম্বর মাসেও। এই অস্থির সময়ের প্রভাব পড়েছে দেশের শিল্প ও রপ্তানি খাতসহ অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে; কমে গেছে রাজস্ব আয়। নতুন সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নানারকম বিধিনিষেধ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে উন্নয়ন কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়। এসব কারণে শেষ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে ইতিহাসের সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়নের রেকর্ড হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গড় এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। এই মন্ত্রণালয়গুলোকে মোট বরাদ্দের প্রায় ৭৭ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনও মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নই দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পারেনি।
বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৮ দশমিক ২৬ শতাশং বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ, রেলপথ বিভাগ ৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।
এছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৫৮, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত ৬ দশমিক ২৭, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ৬ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় করেছে। বাস্তবায়ন বিবেচনায় আর কোনও মন্ত্রণালয় ৫ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি।
কমেন্ট