বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত পূরণে প্রকল্পে নিতে হবে জনগণের মত
ওই নির্দেশিকায় সংশ্লিষ্ট জনগণকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অংশটি ছিল না। পরিপত্র জারির পর এটি নির্দেশিকার অংশ হিসাবে অনুমোদন দেওয়া হবে।
বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়ার শর্ত পূরণে প্রকল্প প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় এখন থেকে সংশ্লিষ্ট জনগণের মতামত নিতে হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে জানিয়েছে, প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর দুই সপ্তাহ আগে আগে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট জনগণের মতামত নিতে হবে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ৭৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিতে কয়েকটি শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে এটিও রয়েছে।
সেই কারণে ২০২২ সালের ১২ জুন পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রের সম্পূরক হিসেবে গত বুধবার নতুন পরিপত্র জারি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব শারমিনা নাসরীন এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক এবার আমাদের ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের বাজেট সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। ওই বাজেট সহায়তা পাওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।”
“এই পরিপত্রের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরের জন্য বাজেট সাপোর্ট প্রাপ্তির শর্ত পূরণ করা। আর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করা। জবাবদিহিতা ও জনগণের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাও এর উদ্দেশ্য,” বলেন তিনি।
পরিকল্পনা বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন প্রক্রিয়াকরণ ও সংশোধন নির্দেশিকা ২০২২ (গ্রিন বুক) এর সংশোধনীর মাধ্যমে নতুন পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
ওই নির্দেশিকায় সংশ্লিষ্ট জনগণকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অংশটি ছিল না। পরিপত্র জারির পর এটি নির্দেশিকার অংশ হিসাবে অনুমোদন দেওয়া হবে।
পরিপত্রে বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর আগে সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের জন্য প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত নিতে হবে।
সাধারণ মানুষের মতামত প্রদানের সুবিধায় প্রকল্প-কর্মসূচির প্রাথমিক তথ্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথা সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন তুলে ধরবে ওয়েবসাইটে।
এছাড়া প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা, প্রকল্প এলাকা, আর্থিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্য ফলাফল, পরিবেশ ও সামাজিক প্রভাব, দুর্যোগের ঝুঁকি ও ঝুঁকি প্রশমন পরিকল্পনা এবং পরিবেশ রক্ষার উদ্যোগগুলো তুলে ধরতে হবে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশের পর সাধারণ মানুষকে মতামত দেওয়ার জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় দিতে হবে বলে ওই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সম্পর্কে মতামত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের আইসিটি সেল এর মাধ্যমে একটি কমেন্ট বক্স তৈরি করতে হবে।
এরপর ওয়েবসাইটে পাওয়া মতামত উদ্যোগী মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বিস্তারিত পর্যালোচনার পর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করে অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণের পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যুগ্ম সচিব নাসরীন বলেন, এর আগে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি নিয়ে এ বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সভার ভিত্তিতে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশে এই সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করা হয়। এরপর অর্থ উপদেষ্টার অনুমোদন নিয়ে এই পরিপত্র জারি করা হয়।
এ বিষয়ে কৃষি সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ড. মো. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এআরএইচ ডট নিউজকে বলেন, “সংশ্লিষ্ট জনগণের কাছ থেকে মতামত ও পরামর্শ নিয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হলে এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
“সত্যিকার অর্থেই জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হলে এই উদ্দেশ্য সফল হবে বলে আমি মনে করি।”
কমেন্ট