বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমাল আদানি

বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমাল আদানি

বৃহস্পতিবারের পর থেকে তারা বাংলাদেশে ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে বলে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ডেটা ও বিপিডিবির কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে ভারতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আদানি পাওয়ার। বকেয়া বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় দুই দফায় মোট সরবরাহের ৬০ শতাংশের বেশি কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।

বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাওনা ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ের জন্য এই দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়েছে ভারতের বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিটি।

বৃহস্পতিবারের পর থেকে তারা বাংলাদেশে ৫২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে বলে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের (পিজিবি) ডেটা ও বিপিডিবির কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে।

ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি পাওয়ার। যা বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করে। গত অগাস্টের শুরুতেও তারা ১৪০০-১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বকেয়ার অর্থ উদ্ধারে গত ৩১ অক্টোবর একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তারা। ফলে নভেম্বরে তারা ৭০০ থেকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল বাংলাদেশে। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পর থেকে তা আরও কমাল আদানি গ্রুপের ওই বিদ্যুৎ কোম্পানি।

অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেন, “আমরা পর্যায়ক্রমে সেই বকেয়া পরিশোধ করছি। সেইসঙ্গে কেউ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে তার বিকল্প ব্যবস্থাও নেব। কোনো বিদ্যুৎ সরবরাহকারীকে আমাদের জিম্মি করতে দেব না।”

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ বকেয়া পরিশোধের গতি বাড়ালেও এবং গত ৭ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ পরিশোধের একটি সময়সীমা আদানি প্রত্যাহার করলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কমানো অব্যাহত রয়েছে।

আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ দিচ্ছে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় ১২ টাকা করে নেয়। এই দর ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকের দরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।

বিষয়টি নিয়ে গত সরকারের আমলেই প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু তার সুরাহা হয়নি। আর আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চাহিদার প্রায় এক দশমাংশ বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ, ফলে রাতারাতি চুক্তি বাতিল করাও সরকারের জন্য ‘কঠিন’।

এদিকে ডলার সংকটের কারণে গত সরকারের সময় থেকেই আদানির বিপুল অঙ্কের বিল বকেয়া পড়ে গেছে। সেই অঙ্ক ইতোমধ্যে ৮৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর। বকেয়া আদায়ে কিছুদিন পরপরই বাংলাদেশে ছুটে আসছেন আদানির প্রতিনিধিরা।

বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য গত ৩১ অক্টোবর সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ১৭ কোটি ডলারের ঋণপত্র (এলসি) পরিশোধ করতে বলেছিল আদানি পাওয়ার।

চুক্তি অনুযায়ী আদানিকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করার কথা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। তবে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকটি অপারগতা প্রকাশ করায় সেই অর্থ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পাঠাতে চেয়েছিলেন বলে সূত্রের বরাতে জানায় টাইমস অব ইন্ডিয়া। তবে তা চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় আদানি পাওয়ার তাতে সম্মতি দেয়নি।

এ পরিস্থিতিতে আদানি পাওয়ার একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়ায় বাংলাদেশের চলমান লোড শেডিং আরও বেড়েছে।

এরই মধ্যে গত ৩ নভেম্বর টাইমস অব ইন্ডিয়া খবর দেয়, বকেয়া নিষ্পত্তির সুরাহা না হলে আদানি পাওয়ার আগামী ৭ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।

ওই খবর বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে আসার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমরা অক্টোবর মাসে ওদেরকে (আদানি পাওয়ার) প্রায় ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছি; সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

“এছাড়া তাদের জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ডলারের এলসি করা হয়েছে। তারপরও তাদের এমন আচরণ খুব আশ্চর্যজনক, বিস্ময়কর এবং দুঃখজনক।”

“আদানি যদি সত্যিই বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমরা এটা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গ্রাহকরা যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়ে, সেজন্য আমরা বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছি,” বলেছিলেন তিনি।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে উঠল ১২.৬৬ শতাংশে পরবর্তী

খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে উঠল ১২.৬৬ শতাংশে

কমেন্ট