১৫ বছরে পাচার ২৪০ বিলিয়ন ডলার: শ্বেতপত্র

১৫ বছরে পাচার ২৪০ বিলিয়ন ডলার: শ্বেতপত্র

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা।

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বছরে গড়ে ১৬ বিলিয়ন (১৬০০ কোটি) ডলার পাচার হয়েছে।

অর্থনীতিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত ১৫ বছরে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা।

এ হিসাবে শেখ হাসিনার ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ২৪০ বিলিয়ন ডলার, এই অর্থ বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরতে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি বিভিন্ন দলিলপত্র পর্যালোচনা করে ও নানা অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।

সেই ধারাবাহিতায়দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি রবিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে এই প্রতিবেদন হাস্তান্তর করা হয় বলে প্রেস উয়িংয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি শিগগির জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করার আশা করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভয়ঙ্কর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বলে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এ প্রতিবেদনকে একটি যুগান্তকারী কাজ হিসেবে অভিহিত করে কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এসময় তিনি প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার পরে সেটি প্রকাশ করা উচিত এবং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে পড়ানো উচিত বলে মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদন পাওয়ার আগে প্রধান উপদেষ্টা তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর উত্তরাধিকারসূত্রে আমরা যে অর্থনীতি পেয়েছি তা এখানে দেখা যাবে। এই দলিল থেকে জাতি উপকৃত হবে।”

তিনি বলেন, “এতে আমরা জানবো, আমাদের রক্ত চুষে তারা কীভাবে অর্থনীতিকে লুণ্ঠন করেছে। দুঃখের বিষয় হলো তারা প্রকাশ্যে অর্থনীতি লুট করেছে। এবং আমাদের বেশিরভাগই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারিনি।”

এমনকি লুণ্ঠনের ঘটনার সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোও অনেকাংশে নীরব ছিল বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

শ্বেতপত্র হস্তান্তরের সময় কমিটির প্রধান বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সরকারের কোনও হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করেছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “সমস্যাটি আমরা যা ভেবেছি তার চেয়েও গভীর। ৩০টি অধ্যায় এবং ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রটি বিগত ১৫ বছরের সরকারের সময় কীভাবে অলিগার্কদের (ব্যক্তি পর্যায়ের অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক) জন্ম দিয়েছে, যারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছিল।”

কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তারা ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন (৮৭০০) ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু পরে এসব প্রকল্পের জমির দাম বাড়িয়ে দেখিয়ে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। অর্থাৎ এই সাত প্রকল্প থেকেই প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে।

কোনও ধরনের ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

অর্থপাচারে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য বিশেষ বিচার শুরুর পরামর্শও দিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য।

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, গত ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে এবং ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে।

কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, বিগত শাসনামলে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ প্রায় ৪৫০ বিলিয়ন ডলার।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয় জানিয়ে কমিটির আরেক সদস্য ম. তামিম বলেন, এই বিনিয়োগ ১০ শতাংশ কমানো গেলে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার বাঁচানো যেত।

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি পরবর্তী

বিদেশি ঋণের চেয়ে পরিশোধ বেশি

কমেন্ট

এই সংক্রান্ত আরও খবর