ভ্যাট না বাড়িয়ে ব্যয় কমান, সরকারকে ডিসিসিআই

ভ্যাট না বাড়িয়ে ব্যয় কমান, সরকারকে ডিসিসিআই

সাধারণত জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাজেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্কসহ বিভিন্ন কর বাড়ানো-কমানো হয়ে থাকে। এবার বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেটের মাধপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও কর বাড়িয়েছে সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।

ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কোনও ধরনের আলোচনা ছাড়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভ্যাটসহ নানা শুল্ক-কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক সংবাদ সম্মেলন থেকে শুল্ক না বাড়িয়ে সরকারি ব্যয় কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও করপোরেট কর বাড়িয়েছে ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার। অংশীদারদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে ভ্যাট বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

রাজধানীর মতিঝিলে সমসাময়িক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এ সময় ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরীসহ সংগঠনটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রথমার্ধ (ছয় মাস, জুলাই-ডিসেম্বর) শেষ হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছিল এই অর্থবছরের বাজেটের বাস্তবায়ন।

সাধারণত জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাজেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট, শুল্কসহ বিভিন্ন কর বাড়ানো-কমানো হয়ে থাকে। এবার বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাজেটের মাধপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবায় শুল্ক ও কর বাড়িয়েছে সরকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি রয়েছে, ডলারের দাম বেশি। গণ–অভ্যুত্থানের পর বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ঋণের সুদহারও অনেক বেশি। এমন পরিস্থিতিতে ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অর্থনীতির গতি কমিয়ে দেবে। এতে চাপে পড়বে আপামর জনগণ।”

“সরকারের এমন পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা একমত নই। বেসরকারি খাতে একসঙ্গে এতগুলো জায়গায় ভ্যাট বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতীমূলক।”

এ বিষয়ে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

সরকার নীতির ধারাবাহিকতা ঠিক না রাখায় ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জ বেড়ে যায় বলে জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। বলেন, নীতির ধারাবাহিকতা ঠিক না রাখার সর্বশেষ উদাহরণ হলো গত সপ্তাহের এই ভ্যাট বৃদ্ধির ঘটনা। মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিকস খাতের কিছু পণ্যে আয়কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। এটি ব্যবসায়ীদের শুধু বিপদে ফেলবে না, একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিকেও খারাপ করছে। আয়কর বাড়ানোয় আগামী তিন মাসের মধ্যে মোটরসাইকেলের দাম ১০-১৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।

মানুষকে কষ্ট দিয়ে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে সরকারকে অন্য উপায় খোঁজার পরামর্শ দেন তাসকীন আহমেদ। বলেন, “সরকারি ব্যয় ২০ শতাংশ কমানো গেলে সেখান থেকে এক বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় করা সম্ভব। সুতরাং সরকারি ব্যয় কমান। কর-ভ্যাট বাড়িয়ে আমাদের আর নাভিশ্বাস বের কইরেন না।”

দেশে রাজনীতি ও অর্থনীতির গতিপথ আলাদা থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, “দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। বর্তমানে অনেক সংস্কারের কথা শুনছি; সামনে নির্বাচনের আলোচনাও রয়েছে। তবে আমরা মনে করি, অর্থনীতি ও রাজনীতি একই পথে যেন না চলে। রাজনীতি রাজনীতির মতো করে চলুক; সেটি যেন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত না করে।”

এ সময় সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন ব্যবসায়ীরা তো সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছেন, নির্বাচন করছেন। এর জবাবে তাসকীন আহমেদ বলেন, “গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে দিয়ে সবাইকে বিচার করা ঠিক হবে না। আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীদের শুধু ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেই মনোনিবেশ করা উচিত। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আলাদা থাকুক। আর দেশে আইন প্রণয়ন করেন রাজনীতিকেরা। আইন ঠিক থাকলে ব্যবসায়ীরা খারাপ হওয়ার সুযোগ কম পাবেন।”

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য–সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তাসকীন আহমেদ বলেন, “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে অস্থিরতা চলছে, সেটিকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিষয় বলে মনে করছি। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসাতেই কিছু প্রভাব পড়েছে। ফলে ভিসা জটিলতাসহ ব্যবসায়ের অন্য সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান হবে, তত দ্রুত দুই দেশের ভালো হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতির ১১টি বিষয়বস্তুর ওপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআইর কর্মপরিকল্পনার ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তাসকীন আহমেদ।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় মুহূর্ত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মূল কারণ হলো—সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতাসহ উচ্চ সুদহার।

তা ছাড়া বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের ওপর ভ্যাট বৃদ্ধিসহ বেশকিছু পণ্যের করহার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে কতটা পুড়বে শিল্প খাত পরবর্তী

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে কতটা পুড়বে শিল্প খাত

কমেন্ট