খোলা সয়াবিন তেল খাচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

খোলা সয়াবিন তেল খাচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণবিষয়ক এক নীতিসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন।

এক মাস ধরে বাজার থেকে খোলা সয়াবিন তেল কিনে খাচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

তিনি বলেছেন, “মাসখানেক হলো আমার পরিবার বাজার থেকে খোলা সয়াবিন তেল কিনে খাচ্ছে। কারণ, খোলা ও বোতলজাত সয়াবিনের কোয়ালিটি (মান) একই। শুধু দামেই তফাত।”

রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণবিষয়ক এক নীতিসংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন।

তিনি জানান, সুপারশপ স্বপ্নকে খোলা তেল বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সয়াবিন তেলে ভিটামিন এ মিশ্রণ বাধ্যতামূলক। তবে সেটিকে ঐচ্ছিক করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শিরোনামে এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।

‘পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না’ আশার কথা শুনিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, “ভোগ্যপণ্য আমদানিতে বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছিল এস আলম গ্রুপ। তাদের অনুপস্থিতিতে অংশীজনদের নিয়ে ব্যবস্থাপনা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বড় কোনো বিপত্তি এখনো হয়নি। আশাকরি রমজানে কোনো সমস্যা হবে না। আমি নিশ্চিত করতে চাই, বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নেই।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বলেন, “আমরা প্রতিযোগিতা কমিশনকে পুরোপুরি স্বাধীন করে দিতে চাই, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতাবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড না ঘটে। মন্ত্রণালয়ের সেখানে কোনো হস্তক্ষেপ যেন না থাকে, সেদিকে এগোতে চাই।”

এ জন্য প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানকে দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সঙ্গে ব্যবসা করার অনুরোধ জানান। বলেন, “গত ১৫ বছরে টিসিবিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১২ হাজার কোটি টাকার অপারেশন (পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম) পরিচালনা করেন মাত্র ১৪২ জন। অল্প কিছু লোক করপোরেশনটির সঙ্গে ব্যবসা করেন। আমি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব, আপনারা টিসিবির সঙ্গে ব্যবসা করুন।”

ফ্যামিলি কার্ড আরও ২৫ লাখ কমে যেতে পারে

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সারা দেশে এক কোটি মানুষের জন্য পরিবার কার্ড চালু করে টিসিবি। পরিবার কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে বলে মন্তব্য করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ কিছু তথ্য–উপাত্ত চেক করার পর পরিবার কার্ডের সংখ্যা ৫৭ লাখে নেমে আসে। আরেকবার চেক করলে সেটি আরও ২৫ লাখ কমে যাবে। একই বাড়িতে একাধিক কার্ড গেছে। যারা দালানবাড়িতে থাকেন, তাদের হাতেও কার্ড আছে। এগুলো সংশোধন করা হবে।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দিতে বিগত সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় যাদের ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দিয়েছে, তা বিতরণে চরম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত সরকার কার্ড দিয়েছিল এক কোটি মানুষকে, যাচাই-বাছাইয়ে তার সংখ্যা ৫৭ লাখে নেমে এসেছে। পরবর্তী ধাপের যাচাই-বাছাইয়ে এই কার্ড আরও ২০-২৫ লাখ কমে যেতে পারে।

বশিরউদ্দীন বলেন, “বিগত সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতি, জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন), ব্যাংকঋণের সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ডের সামষ্টিক প্রভাব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ধান সংগ্রহে সরকারি সংগ্রহটা সীমিত করতে চাই। সরকারি সংগ্রহটা আমদানিনির্ভর হওয়া উচিত। তাহলে স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বাড়বে।”

“আমার মনে হয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটা পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া দরকার। কারণ, বায়তুল মোকাররমের খতিবের যদি পালিয়ে যাওয়া লাগে, তাহলে বুঝতে হবে কী পরিমাণ ধ্বংস করা হয়েছে সব খাত। হেন কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না, যা ধ্বংস করা হয়নি। সব অপরাধীর মধ্যে একটা জোট তৈরি হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আমাদের নীতিগুলো ধনিক শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য হয়েছে। ভোক্তা বা সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য এসব নীতি গ্রহণ করা হয়নি। বিগত দেড় দশকে দেশে উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি।’

“আমার মনে হয়, করজাল বাড়ানোর চেয়ে কর ন্যায্যতা ও কর সমতা তৈরি করা দরকার।” ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—এমন প্রশ্নও করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খান সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

দেশে বেশি গরিব মাদারীপুরে, কম নোয়াখালীতে পরবর্তী

দেশে বেশি গরিব মাদারীপুরে, কম নোয়াখালীতে

কমেন্ট