জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশে নামবে: এডিবি

জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৯ শতাংশে নামবে: এডিবি

এর আগে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থ বছরের বাংলাদেশে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

চলমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে সংস্থাটি। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে; প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হবে বলে মনে করছে এডিবি।

বুধবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে (এডিও) এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার আগারগাঁয়ে এডিবির ঢাকা অফিসে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এসময় এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হোয়ে ইউন জং উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট চন্দন সাপকোটা বলেন, “প্রবৃদ্ধির এ হিসাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের আগে করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক পুরোপুরি আরোপ হলে প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।”

এর আগে এডিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল, চলতি অর্থ বছরের বাংলাদেশে ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিডিপি প্রাক্কলনের কথা উল্লেখ করে এডিবির পূর্বাভাসের এপ্রিল সংস্করণে বলা হয়েছে, “এ সময়ে অর্থনীতি ধীর গতিতে প্রসারিত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চলতি অর্থ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে।”

তবে উৎপাদন খাত স্থিতিশীল হওয়ায় পরবর্তী প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করছে এডিবি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থ বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২ শতাংশে উঠতে পারে।

কারণ হিসেবে এডিবি বলেছে, খুচরা বাজারের প্রতিযোগিতা কমে যাওয়া, বাজার সম্পর্কে যথাযথ তথ্য না থাকা, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

তবে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি।

২০২৩-২৪ অর্থ বছরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে তা কমে শূন্য দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসতে পারে। কারণ বাণিজ্য ঘাটতি কমছে এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হোয়ে ইউন জং বলেন, “বাংলাদেশের অর্থ বছরের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শ্রমিক অসন্তোষ এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলেছে। তবে উৎপাদন খাত স্থিতিশীল থাকায় পরবর্তী প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।”

বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত হিসাবে গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বাংলাদেশের ৪ দশমিক ২২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বিবিএস মঙ্গলবার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপির হিসাব প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে দেশে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথ গতির কারণে প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায়, বিশেষ করে শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা।

চলতি অর্থ বছরের তিন প্রান্তিক (নয় মাস, জুলাই-সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-ডিসেম্বর ও জানুয়ারি-মার্চ) শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় প্রান্তিকের (তিন মাস, অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

এডিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ২০২৫ সালে ভারতে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, মালদ্বীপে ৬ শতাংশ, ভুটানে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হোয়ে ইউন জং বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতির গতি শ্লথ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সীমিত অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ, কম বিদেশি বিনিয়োগ, ব্যাংক খাতের মন্দ ঋণ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মধ্যে থাকায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।”

তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন তিনি।

হোয়ে ইউন জং বলেন, “অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে মন্দ ঋণ সমস্যার সমাধান, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে।”

এসময় সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশেষ করে প্রকল্পের প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর ‍ওপর জোর দেন তিনি।

দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে এডিবি নীতিভিত্তিক ঋণ, প্রকল্প বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে সরকারকে এসব ক্ষেত্রে সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলেও জানান আবাসিক প্রতিনিধি।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করতে হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ- এ প্রশ্নে হো ইউন জং বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিকোণ থেকে তার পণ্য এবং বাজারকে বহুমুখি করতে হবে।

“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি একটি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপও। তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাংলাদেশকে রপ্তানির জন্য তার বাজার ও পণ্যকে বহুমুখি করতে হবে।”

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ তার শুল্ক ব্যবস্থাকে বিবেচনা করে নিজস্ব আমদানি শুল্ক কাঠামোকে যৌক্তিক করার এবং অ-শুল্ক বাধা সংস্কার করার সুযোগও নিতে পারে।

“এই ধরনের শুল্ক সংস্কার শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।”

এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি আরও বলেন, “পাল্টা শুল্কের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঠিক কতটা প্রভাব পড়বে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। আমরা প্রভাবের ওপর বিশ্লেষণাত্মক কাজ চালিয়ে যাব এবং জুলাই মাসের এডিও আপডেটে আরও তথ্য প্রদান করা হবে।”

মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কমেছে খাদ্যে পরবর্তী

মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়লেও কমেছে খাদ্যে

কমেন্ট