বেশি ঋণ করে সমস্যায় পড়তে চাই না: এনবিআর চেয়ারম্যান

বেশি ঋণ করে সমস্যায় পড়তে চাই না: এনবিআর চেয়ারম্যান

মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

বেশি ঋণ করে ‘গণি মিয়ার’ মতো সমস্যায় পড়তে চাই না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আবদুর রহমান খান।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে তিনি বলেছেন, “সরকার রাজস্ব আয় না বাড়িয়ে এবং বেশি ঋণের মাধ্যমে বেশি ব্যয় করে ‘গণি মিয়ার’ মতো সমস্যায় পড়তে চায় না। অবশ্যই আমাদের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে।”

মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

সামষ্টিক অর্থনীতির অংশীদারত্ব ও রাজস্ব পদক্ষেপ নিয়ে যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে ইআরএফ এবং ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা এফআইসিসিআই।

ইআরএফ–এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ। ফরেন চেম্বারের পক্ষে বক্তব্য দেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা।

অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, “আমরা যদি বেশি পরিমাণ ঋণ করি, আমাদের খরচ যদি বড় করি এবং সেই খরচ যদি ‘গণি মিয়ার’ মতো ঋণ করে হয়, তাহলে ‘গণি মিয়া’ যে রকম সমস্যায় পড়বে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র নামক ‘গণি মিয়া’ও একই সমস্যায় পড়বে।”

আবদুর রহমান খান বলেন, “অবশ্যই আমাদের ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য থাকতে হবে। যাতে করে আমরা আমাদের ঋণের বোঝা না বাড়াই এবং পরবর্তী প্রজন্মের ওপরও ঋণের এ বোঝা না বাড়ে।”

‘গণি মিয়া’ বাংলাদেশে খুব সাধারণ ও পরিচিত একটি নাম, যা অধিকাংশ সময় রূপক বা উপমা হিসেবে ব্যবহার হয়। ‘গণি মিয়া’ নামটি সাধারণত একজন দরিদ্র কৃষকের প্রতীক, যিনি সীমিত আয়ের মধ্যেও অতিরিক্ত খরচ করেন এবং ধারদেনা করে সেই খরচ চালান।

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এবারের বাজেটের আকার যেন যথাসম্ভব বাস্তবসম্মত হয়, খুব উচ্চাভিলাষী না হয়—প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা সে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে আমরা বাজেটে ব্যয় কমিয়ে এবং আয় বাড়িয়ে কীভাবে এ আয়-ব্যয়ের দূরত্ব কমাতে পারি, সে চেষ্টা করছি।”

সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমাদের মধ্যে যে মুগ্ধতা রয়েছে, সেটি আপাতত বাদ দিতে হবে। আপাতত ৩-৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়েও যদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো সামাল দেওয়া যায়, সেটি বড় বিষয় হবে। সে ক্ষেত্রে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে গেলে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।

আইএমএফের ঋণ এখনও শেষ হয়ে যায়নি

সেমিনারে আইএমএফের ঋণের কিস্তি অনুমোদনের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান এনবিআর আব্দুর রহমান খান। তিনি বলেন, “এই সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এগ্রিমেন্ট হয়নি, তবে সুযোগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি।”

তিনি জানান, আগামী ৫ মে ওয়াশিংটনে আইএমএফ-এর স্টাফ লেভেল মিটিংয়ে ঋণের কিস্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এরপর ২৩ মে সংস্থাটির বোর্ড মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

“আমরা আশাবাদী, ঋণের কিস্তির বিষয়ে ভালো সিদ্ধান্ত আসবে,” বলেন তিনি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আইএমএফ-এর সঙ্গে কিছু বিষয়ে এখনও আলোচনা বা দরকষাকষি চলছে। বিশেষ করে বিনিময় হার উন্মুক্ত করার বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে।”

বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি।

এরপর তিন কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে।

তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে।

দুই পক্ষ (সরকার ও আইএমএফ) সমঝোতায় আসতে না পারায় বাকি চার কিস্তির ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার পাওয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নয় মাস হতে চলেছে; এই সময়ে আইএমএফের কোনও ঋণ পায়নি বাংলাদেশ।

তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার ছাড় করেছিল গত বছরের জুনে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি: বিশ্ব ব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় বাংলাদেশ পরবর্তী

খাদ্য মূল্যস্ফীতি: বিশ্ব ব্যাংকের ‘লাল’ তালিকায় বাংলাদেশ

কমেন্ট